বিশেষ প্রতিনিধি

  ১৯ মার্চ, ২০১৮

শুরু হলো বাঙালির সশস্ত্র প্রতিরোধ

প্রতিরোধের পথ বেছে নিল বাঙালি। পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হলো সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি দাঁড়াল জনতা। ঘটল বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ। স্বাধীনতাকামী মানুষ মরতে লাগল। মোড়ে মোড়ে, রাজপথে, অলি-গলিতে বেজে উঠল রাইফেল, কামান, বাঁশের লাঠি। রচিত হলো বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালির সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রথম ইতিহাস। আজ ১৯ মার্চ। একাত্তরের এই দিনেই পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম শুরু হলো সংগ্রামী বাঙালির সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। সকালে হঠাৎ করেই ঢাকার জয়দেবপুর ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পাকিস্তানের সামরিকজান্তার সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ বাধে জনসাধারণ ও বাঙালি সৈনিকদের। বাঙালির ওপর গুলি চালাতে দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নকে আদেশ দেয় ৫৭ নং ব্রিগেডের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জাহান জাব আরবার। কিন্তু সে আদেশ না মেনে মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে বসে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অর্ফিসার ও জওয়ানরা। শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন গাজীপুর অর্ডন্যান্স ফাক্টরির বাঙালি কর্মচারী, জয়দেবপুর চৌরাস্তা ও ও আশপাশের গ্রামবাসী, দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি জওয়ান ও অফিসার এবং টঙ্গী শিল্প এলাকার শ্রমিকরা। শহীদ হন হুরমত, নিয়ামত ও মনু খলিফাসহ অর্ধশত এবং আহত হন দুই শতাধিক। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আড়াই মাইল রাস্তায় শত শত ব্যারিকেড দেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। লাঠি ও বন্দুক নিয়ে প্রতিহত করেন পাকিস্তানি বাহিনীকে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজধানী ঢাকাও।

সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী গাজীপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করে। খোয়া যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র অনুসন্ধানের নামে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় নিরীহ-নিরপরাধ মানুষের ওপর। একদিন বিরতির পর সকালে পুনরায় শুরু হয় মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। দেড় ঘণ্টার বৈঠকে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু কোনো সমাধান ছাড়াই মুলতবি হল তৃতীয় দফার সে বৈঠক। বৈঠকে ‘জয় বাংলা’ সেøাগানের ব্যাখ্যার কথা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়েও কালিমা পাঠের সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করব আমি।

জয়দেবপুর ও গাজীপুরে বাঙালির ওপর পাকিস্তানি সেনাদের পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় প্রচ- ক্ষোভ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, তারা (সামরিক জান্তা) যদি মনে করে থাকে যে, বুলেট দিয়ে জনগণের সংগ্রাম বন্ধ করতে সক্ষম হবে, তাহলে তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করছে। জনগণ যখন রক্ত দিতে তৈরি হয়, তখন তাদের দমন করতে পারে এমন শক্তি দুনিয়ায় নেই। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়। গোটা পূর্ব পাকিস্তানে আজও কালো পতাকা ওড়ে। কর্মবিরতি চলে সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। কুচকাওয়াজ ও অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ চলে ছাত্রছাত্রী ও তরুণ-তরুণীদের।

সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টার বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কার্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন। ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে অভিমত দেন। করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোবিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণআন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের ঘোষণা দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist