আদালত প্রতিবেদক

  ১৯ মার্চ, ২০১৮

খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি শেষ : আদেশ আজ

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ-িত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুইটি লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আজ সোমবার আদেশ দেওয়া হবে। গতকাল রোববার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ শুনানি গ্রহণ করেন। দুপুর ১২টার দিকে শুনানি শেষে আদালত আদেশের দিন ধার্য করেন।

সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হয়। শুরুতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া যে অসুস্থ, এর স্বপক্ষে তার আইনজীবীরা চিকিৎসা সনদ আদালতে উপস্থাপন করেননি। তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জামিনের অপব্যবহারের অভিযোগ করেন আদালতের কাছে। এ সময় তিনি বিচারিক আদালতের আদেশ পড়ে শোনান এবং বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের অনুমতি ছাড়াও বিদেশে গেছেন। এর থেকে জামিনের অপব্যবহার আর কী হতে পারে?

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় তিনি (খালেদা জিয়া) বারবার অনুকম্পা পেতে পারেন না। বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার বয়স ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে তার সাজার মেয়াদ কমিয়েছেন। একই বিবেচনায় তিনি কতবার অনুকম্পা পাবেন? বিচারিক আদালত অনুকম্পা দেখিয়েছেন।’

মাহবুবে আলম আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ হবে, আর তার সঙ্গে জড়িত থাকবেন রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি, তিনি কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না।’

হাইকোর্ট এই মামলার শুনানির জন্য চার মাসের মধ্যে পেপার বুক তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুলে ধরে বলেন, ‘হাইকোর্ট চার মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন, আপনারা (আপিল বিভাগ) সময় কমিয়ে দুই মাস করে দেন। বিডিআরের মতো বড় মামলাতেও অল্প সময়ের মধ্যে পেপার বুক প্রস্তুত করা হয়েছিল।’

জামিনের বিরোধিতা করে তিনি আরো বলেন, ‘যখন বিচারিক আদালতে বিচার চলছিল, তখনকার অবস্থা আর এখনকার অবস্থা এক নয়। এখন খালেদা জিয়া একজন দ-িত আসামি। তার বয়স ও অসুস্থতা বিচারিক আদালত আগে বিবেচনা করে ১০ বছরের জায়গায় ৫ বছর সাজা দিয়েছেন। তার সাজা খাটা শেষ হয়ে যাবে আর তার আপিল শুনানি শেষ হবে নাÑ এমন তো কখনো হয়নি। এটা অ্যাবসার্ড। অবশ্যই শুনানি হবে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বিচারিক আদালতের মামলার রায়ের বিভিন্ন অংশ আপিল বিভাগকে পড়ে শোনান। এগুলো তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এর আগে খালেদা জিয়া বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেছেন। তিনি জামিনের অপব্যবহারও করেছেন। তিনি কোর্টকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তিনি মিসকনডাক্ট করেছেন।’ এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও লালু প্রসাদ যাদবের মামলার নজির আদালতকে পড়ে শোনান। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অসুস্থতার যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, এই অসুখ নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন, বিদেশ গেছেন, তার রাজনৈতিক কর্মকা- চালিয়েছেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বক্তব্য শেষ করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। কিছুক্ষণ শুনানি নিয়ে আদালত বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন। এরপর শুনানি শুরু হলে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এ মামলায় জাল নথি তৈরি করে খালেদা জিয়াকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। তার কোথাও কোনো স্বাক্ষর নেই। সম্পূর্ণভাবে জাল নথি তৈরি করে এ মামলা করা হয়েছে।’

এরপর খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, ‘এই মামলার আসামি খালেদা জিয়া বলেই তার জামিনের আদেশের এত বিরোধিতা। খালেদা জিয়া না হলে সরকার এত বিরোধিতা করত না।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ- ও অর্থ দন্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত। এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলে হাইকোর্ট ১২ মার্চ তার চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist