নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ মার্চ, ২০১৮

এক টাকা কর দিলেও ট্যাক্স কার্ড : অর্থমন্ত্রী

পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি করার তাগিদ মোঃ তাজুল ইসলাম এমপির

দেশের নাগরিকদের কর দিতে উৎসাহিত করার ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কর (ট্যাক্স) প্রদান করা প্রত্যেক নাগরিকদের দেওয়া হবে ট্যাক্স কার্ড; যদি কোনো নাগরিক এক টাকাও দেয়, সে ওই সুবিধা পাবেন।

গতকাল রোববার পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনার পর সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে সভাপতিত্ব করেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতিরা অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, আগামী বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়াতে হবে। এছাড়া কর ব্যবস্থার সংস্কার করে ব্যক্তিগত আয়ের করসীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা, ব্যক্তিগত আয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণির জন্য করের পরিমাণ কমানো, সব নাগরিকের জন্য ট্যাক্স কার্ডের প্রচলন করা, ভ্যাট ও করের আওতা বাড়ানোসহ বেশকিছু সুপারিশও করেছেন তারা। আলোচনায় শিক্ষা খাতের দুরবস্থা, শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, চিকিৎসক সংকট, বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি ট্যাক্সের রেট কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এতে কর জালের আওতা বাড়বে এবং সবাই ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত হবেন। তিনি সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফের জন্য অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন।

মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের ঘাটতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। আশা করছি, নতুন বাজেট ঘোষণার আগে অর্থাৎ শেষের দিকে ঘাটতি কমিয়ে আপনি (অর্থমন্ত্রী) প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবেন। উন্নয়নশীল দেশের চিঠি পাওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এমপি তাজুল ইসলাম।

দেশে জ্বালানির গুরুত্ব বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে শিল্প কারখানার উত্তরণ ঘটবে। পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরির উপকারিতা রয়েছে। তাই এ খাতে কর ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। যাতে অন্যরা পরিবেশ উপযোগী গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে পারে। এতে খরচ বেশি হলেও দেশেই মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। এর জন্য যে যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি হবে তার মান নিশ্চিত করার জন্য স্থলবন্দর বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম বন্দরে ল্যাবরেটরি স্থাপন করার পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রীকে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম আরো বলেন, বিদ্যুৎ ও পানির অপচয়রোধ করার জন্য সব জায়গায় সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ কর দিতে সক্ষম। কিন্তু কর দেওয়ার যে প্রক্রিয়াগত জটিলতা রয়েছে সেই ভোগান্তির কারণে তারা করের বাইরে থাকছে। তিনি আরো বলেন, টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের অর্ধেক টাকা সোলার প্যানেল বসানোর কাজে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু প্যানেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইডকল’ যে প্যানেল দিচ্ছে তা নিম্নমানের। স্থাপন করার পর ৬ মাস না যেতেই অচল হয়ে পড়ছে। তাই এই টাকা সোলারের পেছনে ব্যয় না করে স্কুল-কলেজে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে ব্যয় করলে ভালো হবে, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সহায়তা চান এই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহী, এমডি, সিইওদের বেতনের লাগাম টেনে ধরা দরকার। তারা প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বেতন পায়। যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বেতন ২ লাখ টাকা। এটা হতে পারে না। কারণ ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা।

হাছান মাহমুদ উপজেলা পর্যায়ে সেরা ট্যাক্স দাতাদের পুরস্কার দেওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, এতে করে উপজেলা পর্যায়ে ট্যাক্সদাতা বাড়বে। হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা এখনো গাড়ি আমদানি করি। কিন্তু আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠান গাড়ি বানাতে আগ্রহী। তাদের ট্যাক্স সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। এতে করে আমাদের অনেক টাকা সাশ্রয়ী হবে।

বিদেশি মোবাইল কোম্পানির লাগাম টেনে ধরার কথা জানিয়ে বলেন, তারা বিদেশে সব লাভের টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। এটা যেন সব নিয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি করা উচিত। এখন তারা লাভ করছে। মোবাইল কোম্পানির শেয়ার কিছু অংশ যেন দেশি বেসরকারি কোম্পানি কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, টোল আদায়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য এক রকম, পূর্বাঞ্চলের জন্য ভিন্ন রকম। তিনি বলেন, আমাকে গ্রামে ফিরতে যেখানে ব্যক্তিগত গাড়িতে টোল ৫০০ টাকা দিতে হয়, সেখানে চট্টগ্রামে ভ্রমণকারীকে দিতে হয় মাত্র ৭৫ টাকা। এ বিষয়ে সমন্বয় করার জন্য অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, হালদা বাংলাদেশের একমাত্র মাছের প্রজনন ক্ষেত্র। অথচ এই হালদা আজ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। এটাকে বাঁচাতে হলে আগামী বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। পাশাপাশি, রেলপথ নির্মাণে পাথর ও লোহার ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু এসব বস্তুর মূল্য আজ লাগামহীন। তাই ডিউটি সুবিধা কমিয়ে আনা সম্ভব হলে এগুলোর দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে দেশকে বাঁচাতে বিদেশ থেকে কাঠ আমদানি করতে হবে। এই কাজে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে ডিউটি সুবিধা কমাতে হবে, যা আগামী বাজেটে প্রতিফলত দেখতে চাই; অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে এ পরামর্শ দেন রেলপথ সংসদীয় কমিটির সভাপতি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মীর শওকত আলী বাদশা উপকূলীয় মাছ চাষ উন্নয়নে আরো বেশি বরাদ্দের দাবি জানান। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে হরিণ চাষের অনুমতি দিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ফসল ঘরে তোলার আগেই ঋণের কিস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামী অর্থবছরের কৃষকের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই সংসদ সদস্য।

সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা গ্রামে থাকেন না। উচ্চশিক্ষার অজুহাত এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পরিচয়ে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে থাকেন না। ঢাকায় চলে আসেন। ভালো অবস্থানের পরও আমার উপজেলায় চিকিৎসক ধরে রাখতে পারি না। চিকিৎসক সঙ্কট দূর করার জন্য সরকারকে গভীরভাবে বিষয়টি দেখতে হবে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতিক জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ক্রীড়া ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ রাখা হয় তা অপ্রতুল। আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই সংসদ সদস্য।

আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন প্রতিরক্ষা সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ দারা ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাপতি রেবেকা মোমেন প্রমুখ।

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে ১ জুন। বাজেটের আকার এখনো ঠিক হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় জানিয়েছেন, বাজেটের আকার ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist