বিশেষ প্রতিনিধি

  ১৯ মার্চ, ২০১৮

আজ আসছে ২১ বাংলাদেশির মরদেহ

নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২১ জনের মরদেহ আজ ঢাকায় আসছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বিকেলের মধ্যেই মরদেহগুলো ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। এরপর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

এর ফলে মরদেহ পেতে শোকাহত স্বজনদের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হবে আজ। একদিন যে স্বজন বিদায় নিয়েছিল হাসিমুখে, আজ তাদের মরদেহ বুকে নিয়ে কেঁদে উঠবে সবাই। শোকাহত দেশ কাঁদবে স্বজনের শেষ বিদায়ে। চোখের জলে শায়িত করবেন অন্তিম শয়ানে। মর্মন্তুদ এ মৃত্যুর অসহনীয় স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকবেন স্বজনরা। ফেলবেন চোখের জল। যাপন করবেন এক দুঃসহ যন্ত্রণার জীবন। দুর্বিসহ শোক বইতে হবে দেশকে।

অবশিষ্ট যে পাঁচজনকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি, সে মরদেহগুলো কবে নাগাদ দেশে আনা হবে, সে ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। এই মরদেহগুলো ডিএনএ নমুনা দিয়ে শনাক্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে নিহতদের নমুনা দেশে আনা হবে। এখানে স্বজনদের নমুনাও নেওয়া হবে। উভয় নমুনা ম্যাচ করলেই শনাক্ত করা যাবে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে ওই মরদেহগুলো বহন করে আজ বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম শাম্মী এ তথ্য জানান। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। সেখানে জানাজা শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। একই সঙ্গে শনাক্ত হওয়া লাশের স্বজন ও বাংলাদেশি মেডিক্যাল টিম ইউএস-বাংলার ফ্লাইটে ঢাকা ফিরবেন বলে জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, গতকাল রাত পর্যন্ত নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত শেষে রাতেই মৃতদেহগুলোর কফিন প্রস্তুত করা হয়। কফিন প্রস্তুত শেষে নেপাল দূতাবাস মরদেহগুলো নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দূতাবাস সেগুলো আজ সকালে বিশেষ বিমানে ঢাকায় পাঠাবে।

নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র মতে, যে ২১ বাংলাদেশির মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলো আত্মীয়স্বজনকে দেখানো হয়েছে। তারাও শনাক্ত করতে পেরেছেন।

সূত্র জানায়, নিহত স্বজনদের আজ সকাল ৬টায় কাগজপত্রসহ নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসে আসতে বলা হয়েছে। সেখানে প্রথম জানাজার পর সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে মরদেহগুলো নেপাল বিমানবন্দরে নেয়া হবে। নিহতদের স্বজনদের নিয়ে একটি বিমান বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেবে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে। এর আধা ঘণ্টা পর মরদেহ নিয়ে বিশেষ বিমান বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা করবে।

ঢাকায় কিভাবে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবেÑ জানতে চাইলে ইউএস-বাংলার সিইও ইমরান আসিফ বলেন, নেপাল থেকে যে স্বজনরা বাংলাদেশ ফিরবেন তারা ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করার পর অপেক্ষা করবেন। কে কোথায় মরদেহ নিতে চান ইউএস-বাংলাকে জানালে মরদেহ সেখানে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রতিটি মরদেহ বহনের জন্য বিমানবন্দরে অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।

শনাক্ত হওয়া ২১ জনের মধ্যে ১৭ জনের তালিকা দিয়েছে নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস। তারা হলেন বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক-উজ-জামান, পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, খাজা সাইফুল্লাহ, ফয়সাল, সানজিদা ও নুরুজ্জামান।

নিহতদের মরদেহ গ্রহণ ও দাফনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশে নিহতদের স্বজনরা। নিহত রফিক জামানের পারিবারিক বন্ধু সুমন জাহিদ জানান, ঢাকায় জানাজার পর রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা ও তাদের সন্তান অনিরুদ্ধ জামানের মরদেহ আজই নোয়াখালীতে নিয়ে দাফন করা হবে।

গত ১২ মার্চ সোমবার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন বাংলাদেশি। যে ১০ বাংলাদেশি প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদের মধ্যে পাঁচজনকে এরই মধ্যে দেশে নিয়ে আসা হয়েছে। দুজনকে পাঠানো হয়েছে সিঙ্গাপুরে। আরো একজন গতকাল রোববার বিকালে ঢাকায় ফিরেছেন। কবির হোসেন নামে আরো একজনকে আজ দেশে পাঠানো হবে। আর নরভিক হাসপাতালে থাকা ইয়াকুব আলীকে চিকিৎসার জন্য ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস। গত শনিবার পর্যন্ত দেশে ফেরা পাঁচজন হলেন শাহরিন আহমেদ, মেহেদী হাসান, সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, আলমুন্নাহার অ্যানি ও রাশেদ রুবায়েত। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে তারা ভর্তি আছেন।

দুর্ঘটনার পর দিনই হতাহতদের স্বজনদের নেপাল নিয়েছিল ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ। তবে এত দিন তারা নিহতদের লাশ দেখতে পারেননি। শুক্রবার সবার ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার পর শনিবার লাশ শনাক্ত শুরু হয়। বাংলাদেশি ছাড়াও ওই দুর্ঘটনায় নিহত ১০ নেপালি ও এক চীনা নাগরিকের লাশ শনাক্ত হয়েছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে।

দেশে এই প্রথম এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এত মানুষের করুণ মৃত্যুর শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না কেউ। শোকাচ্ছন্ন গোটা দেশ। নিহত মানুষগুলো জন্য থামছে না বেঁচে থাকা স্বজনদের চোখের জল। অগ্নিদগ্ধ চিকিৎসাধীন মানুষগুলোর বেঁচে থাকার আর্তি আরো বেশি বেদনাবিধুর করে তুলেছে চারপাশ। সর্বত্র এখন কেবলই কান্না, কেবলই দুঃখ। এক সঙ্গে এত মানুষের এমন করুণ মৃত্যুর শোক যেন বইতে পারছে না দেশ।

এত মৃত্যু এবার বিশেষভাবে শোকাহত করেছে দেশকে। নিহতের অধিকাংশই নানাজনের সঙ্গে নানাভাবে পরিচিত ও জনপ্রিয় সৃজনশীল মানুষ। নানা বন্ধনে বাধা একে অন্যের সঙ্গে। কেউ আত্মীয়, বন্ধু, কেউবা সহকর্মী। কাজে, আড্ডায়, রাজনীতি, আন্দোলনে কিংবা পেশাগত কাজে নিহতদের সঙ্গে নানা স্মৃতি সবার। রয়েছে নানা মুহূর্তের আনন্দযাপন নানা ছবি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে উদ্ভাসিত সেসব স্মৃতি আরো বেশি বেদনাবিধুর করে তুলেছে দেশকে; ব্যক্তি থেকে সমাজের নানা স্তরে। নানাভাবে স্মরণ করা হচ্ছে তাদের। কর্মক্ষেত্রে, দূতাবাসে, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চর্চা কেন্দ্রে খোলা হয়েছে শোকবই। স্মৃতি লিখতে গিয়ে চোখের জলে ভিজছে কাগজ।

প্রশ্ন উঠছে দুর্ঘটনা এড়াতে আগেভাগেই উভয় দেশের বিমান কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি নিয়েও। গত সোমবাদুধুর্ঘটনার পর থেকেই এমন প্রশ্নও উঠছে সর্বত্র। জোরালো হচ্ছে দুর্ঘটনার তদন্তের দাবি। এ নিয়ে কথা বলছেন দেশ-বিদেশের বিমান বিশেষজ্ঞরা। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। সবাই উদগ্রীব দুর্ঘটনার মূল কারণ জানতে। আলোচনা হচ্ছে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে। কোন পথে ও কিভাবে এমন দুর্ঘটনার তদন্ত করা যায়Ñ সে পথ যেমন বাতলে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা; তেমনি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তদন্তের সময়সীমা ও পরিধি নিয়েও। এমনকি নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ হওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist