প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ মার্চ, ২০১৮

রোহিঙ্গাবিহীন রাখাইনে বসতি গড়ছে বৌদ্ধরা

মিয়ানমারের রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের একটি আদর্শ গ্রাম ‘কোয়ে তান কাউক’। এক সময় এই এলাকায় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের আধিপত্য ছিল। কিন্তু সেসব আজ অতীত। অভিবাসী রাখাইন জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন করে এই গ্রাম তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের প্রবেশ পথে বাঁশের মাথায় টানিয়ে রাখা হয়েছে বৌদ্ধদের পতাকা। গ্রামটিতে এখন বসতি গেড়েছে বৌদ্ধ রাখাইনরা।

গ্রামটিতে নতুন করে আসা বৌদ্ধরা এখন রাখাইনের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ছে; রাখাইনের অধিকাংশ রোহিঙ্গা এখন আর সেখানে নেই। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো বুলডোজার চালিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুছে ফেলা হয়েছে রোহিঙ্গাদের পুড়ে যাওয়া বাড়ি-ঘরের ক্ষত। চাষাবাদের উপযোগী করা হচ্ছে রাখাইন।

দক্ষিণাঞ্চলের তুলনামূলক স্থিতিশীল ও দরিদ্র এলাকা থেকে রাখাইন জনগোষ্ঠী এখন সেখানে এসেছেন; তবে সংখ্যায় অল্প। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা অনেক; কারণ এক সময়ের সংখ্যাগুরু রোহিঙ্গা মুসলিমদের এলাকায় এখন দেশটির একটি দাতাগোষ্ঠী ‘রাখাইনকরণ’-এর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ২৮ বছর বয়সী চিত স্যান আইন কোয়ে তান কাউক গ্রামে এসেছেন স্বামী ও এক সন্তানকে নিয়ে। মুসলিমদের গালি দিয়ে রাখাইন এই বৌদ্ধ নারী বলেন, ‘আমরা সত্যিই ওই কালারদের (উগ্রপন্থি রাখাইন বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ‘কালার’ বলে ডাকে) ভয় পাই এবং এখানে আসার পরিকল্পনা নেই।’

কয়েক কিলোমিটার দূরে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরের ধ্বংসস্তূপ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন তারা (রোহিঙ্গারা) এখানে নেই। আমাদের আত্মীয়দের সঙ্গে আবার দেখা করার সুযোগ পেয়েছি; যারা এখানেই বসবাস করে।’

গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছে। ১৯৭০’র দশকের দিকে রাখাইনের দক্ষিণ এবং মধ্যাঞ্চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একই ধরনের অভিযানে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়েছে।

গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে; তাতে জাতিগত নিধনের আলামত স্পষ্ট।

তবে মিয়ানমার বরাবরের মতো সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটি বলছে, শরণার্থীরা ফিরে এলে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু রাখাইনে পুনর্বাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠালেও দেশটি সেখান থেকে মাত্র ৩৭৪ জনকে ফেরত নিতে রাজি আছে।

এদিকে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়া অনেক রোহিঙ্গা রাখাইনে প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছেন। রোহিঙ্গাদের অনুপস্থিতিতে সেখানে সরকারি, বেসরকারি ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে জায়গা দখল করে নেওয়া দেশটির পুরনো কৌশলের অংশ। এটাকে ইসলামের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী মিয়ানমারের লড়াই হিসেবে দেখা হয়।

‘মিয়ানমার’স এনিমি উইদিন : বুড্ডিস্ট ভায়োলেন্স অ্যান্ড দি মেকিং অফ দি মুসলিম আদার’ নামের বইয়ের লেখক ফ্রান্সিস ওয়েদ বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাড়াতে ১৯৯০ সাল থেকে উত্তর রাখাইনে সোস্যাল ল্যান্ডস্কেপ কৌশল অবলম্বন করছে সেনাবাহিনী।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়নি মিয়ানমার। একই সঙ্গে ‘বাঙালি’ এবং ‘বহিরাগত’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি স্থাপন প্রকল্পের ন্যায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে তাড়ানোর পর বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে পুনর্বাসন করছে।

‘আমি প্রত্যাশা করছি, আসন্ন বছরগুলোতে সেখানে আরো বেশি বৌদ্ধ বসতি গড়ে উঠবে এবং ওই এলাকায় কী ছিল তা একসময় আমরা ভুলেই যাব। এবং তাদের মুছে ফেলার প্রক্রিয়া এক সময় সম্পন্ন হবে।’ সূত্র : এএফপি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist