ক্রীড়া প্রতিবেদক
ফাইনালে বাংলাদেশ
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষা। উত্তেজনার রেণু ছড়ানো মহা নাটকীয় ম্যাচে শেষ হাসি হাসল বাংলাদেশ। কাল কলম্বোতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই উইকেটের থ্রিলার জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। লাল-সবুজ জার্সিধারীদের অবিস্মরণীয় এই জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের অতিমানবীয় ব্যাটিং দৃঢ়তায় এক বল হাতে রেখে লঙ্কানদের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের চ্যালেঞ্জটা টপকে যায় বাংলাদেশ। স্নায়ুক্ষয়ী এ জয়ের ফলে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ-তামিমরা। রোববার নিদাহাস ট্রফির শিরোপা লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী ভারত।
অলিখিত সেমিফাইনাল ম্যাচে নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে পার্শ্ব নায়কের চরিত্র পাবেন কয়েকজনই। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজের নিয়ন্ত্রিত বোলিং, ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাত, ব্যাট হাতে ওপেনার তামিম ইকবালের ভিত এনে দেওয়া ৪২ বলে ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংস, মুশফিকুর রহিমের ২৫ বলে ২৮ রানের কার্যকর ইনিংস, সবশেষ মাহমুদউল্লার ১৮ বলে ৪৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ ম্যাচে ছক্কা মেরে রূপকথার জয় এনে দেন বাংলাদেশকে।
অথচ ম্যাচটা অনায়াসেই জয়ের কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু হঠাৎই কঠিন হয়ে যায় টাইগারদের কাছে। কয়েকবার তো মুঠো থেকে বেরিয়েও গিয়েছিল প্রায়। ৮.১ ওভারে ৪১ রানে ৫ উইকেট তুলে নেওয়া বাংলাদেশ লঙ্কানদের শতরানের মধ্যে গুটিয়ে দেবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার পর লঙ্কানরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দুই পেরেরার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। দুজনই দেড়শোর্ধ্ব স্ট্রাইক রেটে তুলে নিয়েছেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। কুশল পেরেরা দলীয় সর্বোচ্চ ৬১ রান করেছেন। থিসারা পেরেরার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। এ দুজনই মূলত লঙ্কান বোলারদের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি এনে দেন।
শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ১৬০ রানের লক্ষ্যমাত্রাটা হিমালয়তুল্য হয়ে উঠেছিল ৩৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর। সেখান থেকে বাংলাদেশকে কক্ষপথে ফেরান তামিম ও মুশফিক। এ দুজনের ব্যাটে চড়ে সহজ জয়-ই দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু আচমকা একটা ঝড়ো হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে যায় সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন। ২ উইকেটে ৯৭ থেকে ১০৯ রানের মধ্যে ৫ উইকেট নেই বাংলাদেশের।
১৫ বলের এই ব্যাটিং ধসে একে একে সাজঘরে ফিরে যান মুশফিক, তামিম ও সৌম্য সরকার। বাইশ গজ ছাড়ার আগে মুশফিক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ছুঁয়েছেন এক হাজার রানের মাইলফলক। সঙ্গীহারা তামিমও ফিরেছেন একটু পরপরই। উইকেটে কোনো রকম থিতু হয়ে দুই অঙ্ক স্পর্শ করে বিদায় নেন সৌম্য।
প্রথম ১২ ওভার শেষে ৯৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। জয়ের বন্দরটা তখন খুব কাছেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ১২ রানের মধ্যে তিন উইকেট তুলে নিয়ে লক্ষ্যমাত্রাটা চলে যায় আলোকবর্ষ দূরে। কারণ আগের দুই ম্যাচে সত্তরোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলা মুশফিক বিদায় নিয়েছেন অল্পতেই। পথ হারানো বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান মাহমুদউল্লাহ। ফিকে হয়ে আশা জয়টা পুনরুজ্জীবিত হয়ে তার ৩টি চার ও দুটি ছক্কার টর্নেডো ইনিংসে।
শেষ দিকে সতীর্থদের সাজঘরে আসা-যাওয়ার মধ্যে প্রায় একাই বাংলাদেশের পক্ষে কা-ারি হয়ে দাঁড়ান মাহমুদউল্লাহ। ঠান্ডা মাথায় এগোতে থাকেন তিনি। শেষ ৭ বলে বাংলাদেশের সামনে ১২ রানের সমীকরণ। এমন পরিস্থিতিতে উনিশতম ওভারের শেষ বলে রানআউট হয়ে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ম্যাচের ভাগ্য তখন পুরোটাই শ্রীলঙ্কার হাতে। কারণ মাহমুদউল্লাহ যে স্ট্রাইকে নেই!
"