প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
লি সিয়েনকে শেখ হাসিনা
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারকে বোঝান
দুটি সমঝোতা স্মারকে সই
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে ‘বোঝাতে’ সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটা বোঝা। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করে এদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলাম। নানা কারণে এটা ডিলে হচ্ছে। যেহেতু আসিয়ানের চেয়ার এবং মেম্বার, আপনারা মিয়ানমারের সরকারকে বোঝান; এদের ফিরে যাওয়ার মধ্যেই ওই এলাকার স্থিতিশীলতা ও উন্নতি নির্ভর করছে।’ গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব এবং প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকে এ আহ্বান জানান। চার দিনের সফরে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের আগে তার সম্মানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোং এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। এরও আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং বিমান চলাচলে সহযোগিতার বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
হালিমা ইয়াকুব এবং লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন যদিও এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ। হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে বেশ লম্বা মিটিং হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। দুজনের আলোচনায় একটা জিনিস পরিষ্কার হয়েছে যে, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো ইকোনমিক কোলাবরেশন। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট তাদের সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।
হালিমা ইয়াকুব এবং লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বলেও শহীদুল হক জানান। বাংলাদেশে খাদ্য ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জ্বালানি এবং জ্বালানির বিভিন্ন খাত নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গবৈষম্য ছাড়াও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট। এই দুই বৈঠকেই দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশি নাবিকদের সিঙ্গাপুর বন্দরে সমস্যার বিষয়টি দুই বৈঠকেই আলোচনায় স্থান পায়। পরে বিকেলে শেখ হাসিনা পোর্ট অথরিটি অব সিঙ্গাপুর ঘুরে দেখেন।
মধ্যহ্নভোজে শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর উন্নয়নের ভিন্ন পর্যায়ে দুটি অবস্থান করলেও সমৃদ্ধি অর্জনে দুই দেশের শক্তির জায়গাগুলো পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে। সিঙ্গাপুরে আপনাদের আছে পুঁজি, আধুনিক প্রযুক্তি আর জ্ঞান। আর বাংলাদেশে আমাদের আছে বিপুল জনশক্তি। আমাদের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ, তারা শিক্ষিত। এ বিষয়গুলো যৌথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দুই দেশই আরো লাভবান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য সিঙ্গাপুর একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। আমি আশা করি, সিঙ্গাপুর সরকার তাদের জন্য সম্মানজনক একটি কর্মপরিবেশ দেবে।’
প্রধানমন্ত্রী এই সফরে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য সিঙ্গাপুর সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং সিঙ্গাপুর আসিয়ানের নেতৃত্ব নেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংকে অভিনন্দন জানান। এর আগে দুপুরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং বিমান চলাচলে সহযোগিতার বিষয়ে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের উপস্থিতিতে এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়।
বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বিমান চলাচল বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশে বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব এস এম গোলাম ফারুক এবং সিঙ্গাপুরের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি লোহ নাই সেং। সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের প্রকল্পে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে অপর সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন এবং সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ট্যান সুন কিম।
প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে রোববার সিঙ্গাপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর শেষে আগামীকাল বুধবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশিদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ প্রদানে সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যাতে তাদের কাছে এই দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্যতম পছন্দনীয় কর্মস্থল হিসেবে অব্যাহত থাকে। গতকাল সোমবার দুপুরে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ইস্তানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের দেওয়া এক মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে শ্রমিকদের জন্য সিঙ্গাপুর ক্রমশই একটি অন্যতম পছন্দীয় গন্তব্যস্থল হয়ে উঠছে। আমি আশা করি, সিঙ্গাপুর এই শ্রমিকদের জন্য বরাবরের মতোই সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা অব্যাহত রাখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুর তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্বেষায় একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে। সিঙ্গাপুরের পুঁজি, উন্নত প্রযুক্তি এবং তা ব্যবহারের দক্ষতা রয়েছে। আর আমাদের রয়েছে বিপুল কর্মক্ষম জনশক্তি। যাদের একটি বড় অংশই বয়সে নবীন এবং শিক্ষিত, যেই দক্ষতাকে উভয়ের পারস্পরিক সুবিধার জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ সালে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূত্রপাতের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক একই ধরনের মূল্যবোধ, ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর বিদ্যমান। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্মারকগুলো দু’দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের উপস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
"