শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
উঠল তৃতীয় স্প্যান পদ্মা সেতুর ৪৫০ মিটার দৃশ্যমান
১৪ খুঁটির নকশা এপ্রিলে
বহুল আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ‘৭সি’ নম্বরের তৃতীয় স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়ে বেলা ১১টার দিকে শেষ হয়। এদিকে, বিশেষজ্ঞ দলের দীর্ঘ বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সব অনিশ্চয়তা কেটে আলোর মুখ দেখেছে সেতুর ১৪টি খুঁটির নকশা। আগামী এপ্রিল মাসেই মাওয়া প্রান্তে এবং মাঝ পদ্মায় খুঁটি নির্মাণে পাইল ড্রাইভ কাজ শুরু করবে। এই ১৪টি খুঁটির নিচে ছয়টি করে বাঁকা পাইলের মাঝখানে একটি বাড়তি পাইল সোজাসুজি বসবে। এ পাইল হচ্ছে, ভার্টিক্যাল পাইল। আর পাইলই পদ্মা সেতুর বড় চ্যালেঞ্জটির সফল সমাধান দিয়েছে।
পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী (মূল সেতু) হুমায়ুন কবির জানান, তৃতীয় স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর সাড়ে চার শ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
এর আগে লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টক ইয়ার্ড থেকে গত শুক্রবার দুপুরে তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যানটি নিয়ে রওনা হয় তিন হাজার ৬০০ টন ওজনের ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেনটি। সন্ধ্যার কিছু আগে সেটি সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৫ নম্বর খুঁটির কাছে গিয়ে নোঙর করে। সেখান থেকে গত শনিবার সকালে স্প্যানটি ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির কাছে নেওয়া হয়। পরে গতকাল সকালে স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়ে বেলা ১১টার দিকে শেষ হয়।
এর আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। এর তিন মাস পর গত ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির ওপর দ্বিতীয় স্প্যান বসানো হয়। আর দ্বিতীয় স্প্যান স্থাপনের ৪০ দিনের মাথায় তৃতীয় স্প্যানটি ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর স্থাপন করা হলো। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতুতে ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি থাকবে পানিতে আর দুটি ডাঙায়।
এদিকে, পদ্মার তলদেশের মাটির প্রকৃতি আর তার অননুমেয় আচরণের ফলে সেতুর খুঁটির নকশা পরিবর্তনও আলোর মুখ দেখছে। বিশেষজ্ঞ দলের দীর্ঘ বিশ্নেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সেতুর ১৪টি খুঁটির নির্মাণ শুরু হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাসেই মাওয়া প্রান্তে এবং মাঝ পদ্মায় খুঁটি নির্মাণে পাইল ড্রাইভ কাজ শুরু করবে।
প্রকল্পের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, নতুন নকশায় প্রতিটি খুঁটির ছয়টি পাইল পদ্মার তলদেশে নরম কাদামাটির প্রায় সাত মিটার ওপরে বালুর উপযোগী স্তরে পর্যাপ্ত গভীরতায় রাখা হবে। আর মাঝখানের একটি বাড়তি পাইল কাদামাটি ভেদ করে ১৪৫ থেকে ১৫০ মিটার পর্যন্ত গভীরে চলে যাবে উপযোগী বালুর স্তর পর্যন্ত। শক্ত ও মজবুত ভিতের জন্যই পদ্মা সেতুর সব পাইল একটু বাঁকা করে ডিজাইন করা। তবে এই ১৪টি খুঁটির নিচে ছয়টি করে বাঁকা পাইলের মাঝখানে একটি বাড়তি পাইল একেবারে সোজাসুজি বসবে। এ পাইলকে বলা হচ্ছে, ভার্টিক্যাল পাইল। আর এই ভার্টিক্যাল পাইলই পদ্মা সেতুর বড় চ্যালেঞ্জটির সফল সমাধান দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিটি খুঁটির নিচে ৯৮ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত এত গভীরে পাইল বসানোর নজির বিশ্বের আর কোনো সেতুতে নেই।
মূল সেতুর ৪২টি পিলারের (খুঁটি) মধ্যে ২৬ পিলারের ১৫৬টি পাইলের নকশা চূড়ান্ত থাকায় সেগুলোর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
"