নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ মার্চ, ২০১৮

বেড়েই চলেছে চালের দাম

রাজধানীর বাজারে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও চালের দাম নিয়ে অস্বস্তি রয়েই গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখন চালের দাম বাড়ার কারণ নেই। মিল মালিকরা কারসাজি করে চালের দর বাড়াচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের ভাষ্য, মূল্যস্ফীতিতে চালের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ফলে গেল বছর মূল্যস্ফীতিতে যে বাড়তি প্রবণতা ছিল, তাতে বড় ভূমিকা চালের। চালের দাম নিয়ে সংকট শুরু হয় গত বোরো মৌসুমে হাওরে ফসল নষ্ট হওয়ার পর। সব মিলিয়ে চালের উৎপাদন কমে যায় প্রায় নয় লাখ টন। কিন্তু বাজারে দাম বেশ বেড়ে যায়। সরকারের গুদামেও খাদ্য মজুদ তলানিতে নামে।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে দেশে মোটা চালের গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৬ টাকা ৪৫ পয়সা, যা গত জুনে ৪১ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠে। অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকায় উঠেছিল। আশা ছিল নতুন আমন ধান আসার পর দাম কমবে। কিন্তু আমন ওঠার পর মোটা চালের কেজিপ্রতি দর আরো ৩-৪ টাকা বাড়ে। ফলে চালের দামে গেল বছরের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া ভোগান্তি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রেতারা। তবে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দরে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার ও নিউমার্কেটসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল, মিনিকেট মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পাইজাম, লতা ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা ও স্বর্ণা, ইরি ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হয়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২ টাকা বেশি। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি মার্চ মাস থেকে সরকার সারাদেশে খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম শুরু করেছে। ৩০ টাকা কেজি দরে এ চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় পর্বের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ হতদরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছে সরকার।

কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা মাসুদ মিয়াজি বলেন, আমন মৌসুম শেষ হওয়ার পর এখন ধাপে ধাপে চালের দাম বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেটের দাম বেড়েছে ১-২ টাকা করে। অন্য চালের দামও বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে মিনিকেট প্রতিকেজি ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা, বিআর আটাশ ৫০ টাকা, মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, জিরাশাইল ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মিয়াজি।

উত্তর বাড্ডার সাতারকুল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক বিপ্লব হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছিল। এই সপ্তাহে নতুন করে আর দাম বাড়েনি।

কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, গত শুক্রবার দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকার মধ্যে ছিল। তবে এই সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের পাল্লা ১৮০ টাকায় নেমেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। অবশ্য কারওয়ান বাজারে দাম কমার এই প্রভাব দেখা যায়নি দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাতিরপুল কাঁচাবাজারে। সেখানে ৪৫ টাকায় প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

সরবরাহ ঘাটতির কারণে গত নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ১২০ টাকা হয়েছিল। ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বেড়ে ১০০ টাকার কাছাকাছি চলে যায় তখন। পেঁয়াজের দাম কমলেও আমদানি করা রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কারওয়ান বাজারে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আগের মতোই প্রতিকেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৩৫ টাকা। নতুন আসা পটল, করলা, উচ্ছে, ঢেঁড়শের দাম গত সপ্তাহের মতোই চড়াভাবে রয়েছে। এসব সবজির দাম প্রতিকেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। হাতিরপুলে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে করলা ও পটল।

প্রতি ডজন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। মাছের বাজার কিছুটা চড়া বলে জানিয়েছেন ঠাটারীবাজারে বিক্রেতারা। এই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ৭০০ গ্রাম ওজনের মাঝারি মানের একটি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে একই আকারের মাছ সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল বলে এক বিক্রেতা দাবি করেন।

এছাড়া মাঝারি আকারের রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। রুই কাতলের দাম আকার ভেদে বেশ পার্থক্য রয়েছে। বড় আকারের রুই মাছের কেজি যেখানে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সেখানেই ছোট রুই মাছগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে আড়াশই টাকা।

কারওয়ান বাজারে বাতাসি মাছ প্রতিকেজি ২৫০ টাকা, বাইম মাছ ৭০০, টেংরা ৪০০ এবং শোল মাছ ৪০০ টাকা করে দাম হাঁকান বিক্রেতারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist