প্রতীক ইজাজ

  ০৯ মার্চ, ২০১৮

চলছে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি

পূর্ব পাকিস্তানের ঘরে ঘরে উড়ছে স্বাধীন বাংলার পতাকা। কালো পতাকা উড়ছে সরকারি-আধা সরকারি ভবন ও যানবাহনে। ঢাকা পরিণত হয়েছে মিছিলের শহরে। যেখানে সেখানে চলছে জটলা, সমাবেশ। অস্ত্রের গোপন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে যুবকরা। চলছে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি। মুক্তি সংগ্রামের উত্তাল সমুদ্রে ভাসছে দেশ। হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃত্যু, স্বাধীনতার জন্য বাঙালির সে কি উদ্দীপনা!

বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ ৯ মার্চ হরতাল পালিত হয় গোটা পূর্ব পাকিস্তানে। বন্ধ থাকে সচিবালয়সহ সব সরকারি ও আধা সরকারি অফিস, উচ্চ ও জেলা আদালত। চালু থাকে ট্রেন, লঞ্চ, বাস, ট্যাক্সিসহ অন্যান্য যানবাহন। খোলা থাকে দোকানপাট, হাটবাজার, বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত অফিস। ব্যাংকিং কাজকর্ম চলে। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে বন্ধ থাকে বিমান চলাচল।

সকালে ঢাকায় এলেন ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ হয় তার। পরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। সভায় ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রসভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন হয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সকালেই পিআইএর বাঙালি কর্মচারিরা তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বিকেলে স্বাধীন বাংলা আন্দোলন সমন্বয় কমিটি জনসভা করে পল্টন ময়দানে। সভায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে ২৫ মার্চের মধ্যে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতা দানের আলটিমেটাম দেন ভাসানী। নতুবা শেখ মুজিবের সঙ্গে মিলে সর্বাত্মক সংগ্রাম শুরু করবেন বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি। সভা থেকে স্বাধীন বাংলার জাতীয় সরকার ঘোষণা দিতেও দাবি আসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি।

ইসলামাবাদে এক সরকারি ঘোষণায় আজ বলা হয়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসছেন। করাচিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ন্যাপপ্রধান ওয়ালী খানও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসার কথা জানান। জামায়াতে ইসলামীর প্রাদেশিক আমির গোলাম আযম এক বিবৃতিতে দেশকে চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়ার প্রতি আবেদন জানায়।

হঠাৎ করেই রাজশাহী শহরে রাত ৯টা থেকে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৈশ কারফিউ জারি করে সামরিক কর্তৃপক্ষ। আওয়ামী লীগ বিবৃতিতে সে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানায়। সকালেই পাকিস্তানের ‘খ’ অঞ্চলের (পূর্ব পাকিস্তান) সামরিক গভর্নর হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতিরা সে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে গভীর রাতে সরকার ইসলামাবাদ থেকে টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর হিসেবে ঘোষণা দেয়। তৎপর হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাস ও সংস্থাগুলো।

জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট প্রয়োজনে ঢাকা থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিতে ঢাকার জাতিসংঘ উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। ঢাকায় অবস্থিত জাপানের নাগরিকদেরও প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাপানের পররাষ্ট্র দফতর। পশ্চিম জার্মান নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সামরিক বিমান পাঠানো কথা জানায় সে দেশের সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist