চাঁদপুরে পারভীন আক্তার হত্যা মামলায় আলোচিত সিরিয়াল কিলার রসু খাঁসহ (৪৫) তিনজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। অন্যরা হলেন- জহিরুল ইসলাম (৩৫) ও মো. ইউনুছ (৩৮)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) আবদুল মান্নান এ রায় দেন। রসু খাঁ চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামের মুন খাঁ ওরফে আবু খার ছেলে, জহিরুল পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের সৈয়াল বাড়ির মো. মোস্তাফা ও ইউনুস একই গ্রামের মৃত মিসির আলীর ছেলে। আর হত্যার শিকার পারভীন আক্তার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের পালতালুক গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী। তার বাবার নাম মৃত কাজল খান।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে রসু খাঁ ও অপর আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের নির্জন মাঠে পারভীন আক্তার নামের এক নারীকে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন স্থানীয়দের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পারভীনের বাম স্তন ও দুই পায়ের উরুতে সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ২০টি ক্ষতচিহ্ন ছিল।

পারভীন অজ্ঞাতনামা হওয়ায় ২১ জুলাই তৎকালীন ফরিদগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মীর কাশেম আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিবরণে আরো জানা গেছে, সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ ভালোবাসায় পরাস্ত হয়ে এক সময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয়। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর বাজার উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর এক এক করে তার লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের চিত্র বেরিয়ে আসে। নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ নারী হত্যার কথা। পরে তাকে এবং সহযোগী দুইজনকে পারভীন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। আটকের আড়াই মাস আগে পারভীনকে হত্যা করা হয়। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকান্ড ঘটানোর। রসু যাদের হত্যা করেছে তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুর রহমান ঘটনা তদন্ত শেষে একই সালের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাবিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, মামলাটি দীর্ঘ ৯ বছর চলমান থাকা অবস্থায় আদালত ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন এবং আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর (৯) এর ৩ ধারা এবং দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় এ রায় দেওয়া হয়। রসু খাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা ছাড়াও আরো ৭টি মামলা রয়েছে।

সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সেলিম আকবর।

"