নিজস্ব প্রতিবেদক
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‘পাশে থাকবে’ ভিয়েতনাম
তিনটি সমঝোতা স্মারক সই
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার নিজের কার্যালয়ে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এদিকে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যন্ত্র প্রকৌশল খাতে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ভিয়েতনামের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলোর শান্তি ও স্থিতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমি ভিয়েতনামের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি।’
মিয়ানমারের রাখাইনে গত বছর ২৫ আগস্ট নতুন করে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনের গ্রামে গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে।
জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর এই কর্মকা-কে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও দেশটির সরকার বলে আসছে, এটা ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেও প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের সমর্থনও চেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ত্রান দাই কুয়াং কার্যকর ও স্থায়ী সমাধানের জন্য তার সমর্থন জানিয়েছেন।’
গতকাল সকাল ১০টায় ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। দুই নেতার মধ্যে একান্ত বৈঠক শেষে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে গত রোববার ঢাকা পৌঁছান ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। গত ১৪ বছরে এটাই ভিয়েতনামের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম বাংলাদেশ সফর।
উল্লেখ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে ২০১২ সালের ২ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক হয়েছিল, এবার তা নবায়ন করা হয়েছে। মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ভিয়েতনামের শিল্প ও ব্যবসা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ভিয়েতনামের সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এবং ভিয়েতনামের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী নুয়েন জুয়ান সেউয়ং দুই দেশের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতার বিষয়ে নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারকে সই করেন। মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার কাও চুয়ক হুয়াং একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। আর সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান ও ভিয়েতনামের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার ড্যাং থাই বিচ লিয়েন তৃতীয় সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
"