নিজস্ব প্রতিবেদক
জাফর ইকবালের ওপর হামলায় ধর্মান্ধরা
সন্তানদের অজ্ঞতার অন্ধকার মুক্ত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানদের অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত রাখতে এবং এ বিষয়ে তাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে অভিভাবক-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলাকারী কারা এটা হামলার ধরন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায় তারা তো ধর্মান্ধ। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটা অনুষ্ঠানে বসে ছিলেন, সেখানে তাকে ছুরি মারা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ (এনএসটি) এবং গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাকে (অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল) ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে আসেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। জাফর ইকবালের অবস্থা এখন অনেকটাই স্টেবল, ভালো।
সরকারপ্রধান বলেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায় তারা মনে করে একটা মানুষ খুন করলেই বুঝি তারা বেহেশতে চলে যাবে। তারা কোনো দিন বেহেশতে যাবে না, তারা দোজখের আগুনে পুড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করলে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে তারা এই অন্ধত্বে ভুগছে কেন? যদিও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বাংলাদেশে কোনোরকম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আমরা চলতে দেব না। মাদকের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে অন্যান্য ধর্মের প্রত্যেককে যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই সবার প্রতি আমি জঙ্গিবাদবিরোধী আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এমনকি তিনি যেসব পাবলিক মিটিং করেন সেখানেও তিনি আহ্বান জানান, মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ থেকে সবাই মিলে ছেলেমেয়েকে মুক্ত রাখতে হবে এবং এজন্য যা যা করণীয় সবাইকে তা-ই করতে হবে। এই সভার মাধ্যমেও এজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ১১৬ জনকে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, ২৩৫৮ জনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ (এনএসটি) এবং ১৪১টি প্রকল্পকে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী টোকেন হিসেবে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফেলোশিপ ও অনুদানের চেক তুলে দেন।
সরকার দেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কী করছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখারও আহ্বান জানান।
ছেলেমেয়েদের যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক হয়, বাবা-মাকে সন্তানরা মনের কথা খুলে বলতে পারে পরস্পরের মধ্যে সে ধরনের একটা মানসিক যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েরা বড় হওয়ার সময় একেক বয়সে তাদের একেক রকম মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। সেই বিষয়টির প্রতিও বাবা-মাকে নজর দেয়ার, বাবা-মাকে আরো সহনশীল হওয়ার এবং ছেলেমেয়েরা যেন বিপথে না যায় তার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এত মেধাবী ছেলেমেয়ে তারা যেন কেউ বিপথে না যায় সেটাই আমরা চাই। কারণ দেশকে আমাদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা আর পিছিয়ে যাব না। সামনের দিকে এগোব এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব।
"