প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০২ মার্চ, ২০১৮

মালিতে মাইন বিস্ফোরণে ৪ বাংলাদেশি সেনা নিহত

স্বজনদের মাতমে পরিবেশ ভারী

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োজিত চার বাংলাদেশি সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো চার বাংলাদেশি। গত বুধবার মালির মোপ্তি এলাকার বনি ও দোয়েন্তজা শহরের সংযোগ সড়ক দিয়ে শান্তিরক্ষীরা গাড়িতে করে যাওয়ার পথে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর আইএসপিআর ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে। এদিকে, এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশ সরকারও হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, চার বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর রাতেই স্বজনদের কাছে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিজ নিজ এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহতরা হলেন- সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালাম, পিরোজপুর (৩৭ এডি রেজি. আর্টি.); ল্যান্স কর্পোরাল আকতার, ময়মনসিংহ (৯ ফিল্ড রেজি. আর্টি.); সৈনিক রায়হান, পাবনা (৩২ ইবি) এবং সৈনিক (পাচক) জামাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৩২ ইবি)। আহতরা হলেনÑ কর্পোরাল রাসেল, নওগাঁ (৩২ ইবি); সৈনিক আকরাম, রাজবাড়ি (৩২ ইবি); সৈনিক নিউটন, যশোর (১৭ বীর) এবং সৈনিক রাশেদ, কুড়িগ্রাম (৩২ ইবি)।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে বিদ্রোহীদের হামলায় তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং চারজন আহত হন।

শোক বার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে উল্লেখ করেছেন এবং আহতদের দ্রæত আরোগ্য কামনা করেছেন। একই সঙ্গে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণও করেন তিনি।

আইএসপিআর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মালির স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা আড়াটায় দোয়েঞ্জা নামক স্থানে ভয়াবহ আইইডি বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং আরো চারজন আহত হন।

২০১৩ সালে মালির উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শহর থেকে বিদ্রোহী জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তুয়ারেগদের হটিয়ে দেয় ফরাসি বাহিনী। এরপর ওই বছরই দেশটিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয়। সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশসহ ৫০টি দেশের প্রায় ১১ হাজার সৈন্য কাজ করছে। এই মিশনে বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশের পুলিশ সদস্য রয়েছে দেড় হাজারের বেশি।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, মালিতে মাইন বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি সেনা সদস্য আবুল কালামের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার কালাম পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের উত্তর কলারদোয়ানিয়া গ্রামের মো. মকবুল হোসেনের ছেলে। তার মৃত্যুর খবর বুধবার রাতে এলাকায় পৌঁছলে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।

কালামের চাচাতো ভাই মো. সাইফুল্লাহ জানান, আবুল কালাম ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ২০১৭ সালের ২০ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের হয়ে মালিতে যান। তার লাশটি দ্রæত এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানান তিনি।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, মোহাম্মদ রায়হান পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের সমাসনারী গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে তার মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রায়হানের দুটি মেয়ে। এদের একজনের বয়স বয়স ৮, অন্যজনের ২ বছর। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রায়হান ছিলেন সবার বড়। ছোট ভাই কুয়েত প্রবাসী। রায়হানের মামাতো ভাই নান্নু ও আতিক হাসান জানান, রায়হানের সঙ্গে গত বুধবার শেষ কথা হয় তার পরিবারের। প্রায় ১৫-১৬ মাস হলো রায়হান মালিতে গিয়েছিলেন। আর ২-১ মাস পরেই তার আসার কথা ছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সৈনিক জামাল হোসেনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের ধুমিহায়াতপুর-ঘাইসাপাড়ায়। তিনি মো. মেসের আলীর ছেলে।

জামালের চাচা রবিউল ইসলাম জানান, তারা গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে খবর পান। খবরে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা মেসের আলী। মা ফেরদৌসি বেগম ছেলের ছবি বুকে নিয়ে শোকে স্তব্ধ। স্ত্রী শিল্পী বেগম ৫ বছরের একমাত্র ছেলে শিমুলকে নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছেন। বাড়ির আশপাশের এলাকায় বইছে শোকের মাতম। সকাল থেকে শ শ গ্রামবাসী তাদের বাড়িতে এসে শোকার্ত পরিবারটিকে সান্ত¦না দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মেসের আলীর তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে জামাল হোসেন ছিলেন সবার বড়। জামাল হোসেনের মা ফেরদৌসি বেগম দ্রæত ছেলের মরদেহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া ময়মনসিংহের আকতারের স্বজনরা খবর শুনে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি। তারাও মরদেহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist