নিজস্ব প্রতিবেদক
অগ্নিঝরা মার্চ
একটি স্বাধীন ভ‚খণ্ড, একটি নিজস্ব পতাকা ও একটি জাতি। পৃথিবীর বুকে ঠাঁই করে নিয়েছে একটি দেশ, বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের মাটি থেকে রক্তের গন্ধ যেন এখনো মুছে যায়নি। মনে হয়, এ দেশের মাটির প্রতি ইঞ্চিতে মিশে আছে শহীদের রক্তের ঘ্রাণ। ছেলেহারা মা আজও খুঁজে বেড়ায় হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে। ভাই হারানোর বেদনা নিয়ে আজও বেঁচে আছে শত বোন। বীরাঙ্গনারা যেন মাথা উঁচু করে আমাদের বলেন, এ দেশ অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চ‚ড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১ মার্চ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো সেøাগান দেয়, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানান। বিক্ষোভ-সেøাগানে উত্তাল ঢাকাসহ সারা দেশ। আর কোনো আলোচনা নয়, এবার পাকিস্তানি হানাদারদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি ক্রমেই বেগবান হতে থাকে।
উ™ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাইরে চলছে বিক্ষুব্ধ বাঙালির কঠোর কর্মসূচি দাবিতে জ্বালাময়ী সেøাগান। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের সর্বাত্মক হরতালের ডাক এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় ভাষণ দেন। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দেন, যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার। সেই থেকে শুরু। এরপর ১ মার্চ পেরিয়ে ২ মার্চ। একে একে পার হয় মার্চের ২৫ দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণ চালায়। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই পথ ধরে বাংলার দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনেন একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ।
আমরা দেশের সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে এই দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। অগ্নিঝরা মার্চ আমাদের নতুন করে সোনার বাংলা গড়তে আরেকবার উদ্বুদ্ধ করুক।
"