মৃত স্বামীর জন্য গ্রামের বাড়িতে দোয়া করাতে গিয়ে এক নারী (৪০) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা হয় তার সঙ্গে থাকা ১২ বছরের ছেলেকে। বিষয়টি জানানোর পর স্থানীয় লোকজন সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা চালায়। পরে সালিশের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে থানা-পুলিশ। গত সোমবার দুপুরে রুবেল ও নুর নবী এবং সালিশদার আবুল কাশেম ওরফে মাছ কাশেমকে আটক করা হয়।

ধর্ষণের শিকার ওই বিধবার বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায়। গত বুধবার (২০ ফেব্রæয়ারি) রাতে ছাতারপাইয়া-বসন্তপুর সড়কের পাশের খাল পাড়ে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বিধবা তখন চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। তার সঙ্গে ১২ বছরের ছেলে ছিল। পরে ছেলেই অসুস্থ মাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। বিধবা বলেন, প্রায় তিন মাস আগে তার স্বামী মারা যান। তিনি চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে চট্টগ্রামে

তার সঙ্গে থাকে। আর দেড় বছর বয়সী ছোট ছেলে বাড়িতে তার নানির সঙ্গে থাকে। বুধবার বিকেলে তিনি ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রাত ১০টার দিকে তিনি স্থানীয় বাজারে পৌঁছেন। সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য সেলিম নামের এক ব্যক্তির রিকশা ভাড়া করেন।

ধর্ষিতার অভিযোগ, রিকশাটি কিছু দূর যাওয়ার পর রিকশাচালক প্রস্রাব করার অজুহাত দেখিয়ে রিকশা থামান। এ সময় তিনি মোবাইলে কথা বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নুর নবী ও রুবেল সেখানে হাজির হন। তারা তাকে রিকশা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে একটু দূরে খালপাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ছেলে কান্নাকাটি করলে তাকে ছুরির ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখেন। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা পালিয়ে যান। দুর্বৃত্তরা তার কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন সেটটি নিয়ে যান। পরে তিনি স্থানীয় লোকজনকে ঘটনাটি জানালে তারা বিষয়টি সালিশে মীমাংসার উদ্যোগ নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিধবা ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয় আবুল কাশেম ও মো. হানিফ স্থানীয় বাজারে সালিশে বসেন। সালিশে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের প্রায় অর্ধশত লোক ছিল। সালিশে উপস্থিত দুই অভিযুক্ত রুবেল ও নুর নবীকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে ১০ বার কান ধরে ওঠবস করানো হয়। পলাতক সেলিমকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী এই নারী সালিশ মানেননি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার চান তিনি।

সালিশে উপস্থিত ব্যক্তিদের অনেকে মোবাইলে সালিশের ভিডিওচিত্র ধারণ করলে পরে তা ইন্টারেনেটে ছড়িয়ে যায়। ভিডিওচিত্রে সালিশে একজনকে ওই বিধবার পা ধরে মাফ চাইতে দেখা যায়। এ সময় সালিশের এক মুরব্বি অপরাধীদের ওই নারীকে মা হিসেবে ডেকে মাফ চাওয়ার জন্য বলতে শোনা যায়। কিন্তু নারী সবার সামনে তাদের মাফ না করার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।

ছাতারপাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ঘটনার পরের দিন (বৃহস্পতিবার) ধর্ষণের শিকার ওই নারী তার কাছে এসেছিলেন বিচার চাইতে। ধর্ষণের ঘটনার সালিশ করা সম্ভব নয় বলে তিনি তাকে জানান এবং থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সালিশ করা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি চেয়ারম্যান।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গতকাল তৎপর হয়ে ওঠে থানা-পুলিশ। পুলিশের একটি দল দুপুরে ওই নারীকে মামলার জন্য থানায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নুর নবী ও রুবেলকে এবং সালিশদার আবুল কাশেমকে আটক করে। অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছে।

বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহ্?জাহান শেখ গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী বলেন, রুবেল ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

"