চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে বিস্ফোরণ ও হাতাহাতিতে ছাত্রলীগের সম্মেলন পণ্ডু
ককটেল বিস্ফোরণ, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও হাতাহাতির মধ্য দিয়ে পণ্ডু হয়ে গেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। এ ঘটনায় আহতও হয়েছে বেশ কয়েকজন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের ভেতরে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধা পেয়ে একজনকে লাথি মারেন খোদ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহত পাঁচজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন রবিউল ইসলাম (১৭), সবুজ আহমেদ (১৯), নিপু হাওলাদার (১৮), সাজ্জাদুর রহমান (২০) ও মোহাম্মদ রিফাত (১৭)। আহত অপর দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাউজানের সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ, স›দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মায়ের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাঝখানেই শুরু হয় হট্টগোল। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের বক্তব্য শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলন কক্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষে ¯েøাগান দিতে থাকে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় জাকির হোসেন বার বার ¯েøাগান বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েও ব্যর্থ হন। তার বক্তব্য চলাকালে শুরু হয় হাতাহাতি। একপর্যায়ে বক্তব্য সংক্ষেপ করেন জাকির। বক্তব্যে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বারবার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এই ¯েøাগান বন্ধ করেন।’ ¯েøাগান বন্ধ না হওয়ায় জাকির বলেন, ‘যেসব প্রার্থীর নামে ¯েøাগান হবে, তাদের প্রার্থিতা বাতিল হবে।’ আদেশ, নিষেধ, অনুরোধ কোনো কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিল না তখন তিনি বক্তব্য বন্ধ করে নিজেই ¯েøাগান দিয়ে বলেন, ‘¯েøাগান দেন, দেখি কতজন দিতে পারেন?’ এরপর আর বক্তব্য দীর্ঘ করেননি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।
এরপরই দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাকিব হোসেন সুইন বক্তব্য দেওয়ার সময় অনুষ্ঠানস্থলের বাঁ পাশে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বিকট শব্দে অনুষ্ঠানস্থলে দৌড়া দৌড়ি শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কয়েকটি পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। আতঙ্কিত নেতাকর্মীরা হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার সময় অনেকে আহত হন। এ সময় বাইরে থেকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন এলাকার ছেলেদের মিছিল নিয়ে দলে দলে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিত বাড়ানো হয়।
এক পর্যায়ে গণপূর্তমন্ত্রী মাইকে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যারা এ হামলা করেছে তারা বহিরাগত। এরা সংগঠনের কেউ নয়।’
এদিকে সম্মেলন থেকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে সবার আগে বেরিয়ে যান উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম। এরপর বের হন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পথরোধ করে দাঁড়ায় এক ছাত্রলীগ কর্মী। উচ্চৈঃস্বরে কিছু বলে উঠতেই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাকে সজোরে মারেন এক লাথি। ছাত্রলীগের ওই কর্মী উঠে দাঁড়াতেই ক্ষিপ্ত মন্ত্রী আবারও উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ ঘটনায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সম্মেলনস্থলে। অতিথিরা চলে যাওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আশপাশের সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সম্মেলনে ঢুকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার সময় আগুন সন্ত্রাসীরা বহিরাগত হিসেবে এসে হামলা করেছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের বিবদমান দুইটি উপগ্রæপের কারণে সম্মেলন পÐ হয়ে যায়। ঘটনার জন্য মূলত তারাই দায়ী। বিশৃঙ্খলাকারীরা রাউজানের এমপি ফজলে করিমের নাম ধরে ¯েøাগান দেয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশৃঙ্খলা করে না। শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। বহিরাগতরাই ঢুকে এ হামলা চালিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করা হবে।
কোতোয়ালি জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের ভেতরে ঝামেলা হয়েছে। বাইরে কোনো সমস্যা হয়নি। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন থেকে আহত হয়ে পাঁচজন হাসপাতালে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সোমবার বিকালে নগরীর লালদীঘির মাঠে মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভায় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বন্ধ হয়ে যায় সভা। পরে আওয়ামী লীগের নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে সভা শেষ করেন।
"