নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ইউনিসেফের প্রতিবেদন

৭ লাখ রোহিঙ্গা শিশু হুমকিতে

বাংলাদেশে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুম এবং মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত সাত লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশু হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাম্প্রতিক ঢল শুরুর ছয় মাস পূর্তিতে গত শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় জরাজীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো প্লাবিত হতে পারে। আর তেমনটা হলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাবে। এতে ক্লিনিক, শিশু-শিক্ষা কেন্দ্র ও শিশুদের জন্য চালু করা প্রতিষ্ঠানাদি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক এক লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রয়ে গেছে, যারা সহিংসতার ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণেই তাদের অনেক আত্মীয় ও প্রতিবেশী সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু রয়েছে, যারা গত বছর ও তার আগে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা-স্রোতের সঙ্গে চলে আসে।

জাতিসংঘের শিশু ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের জরুরি কর্মসূচির পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, ‘প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মূলত আটকা পড়েছে! হয় তারা সহিংসতার কারণে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে অথবা মিয়ানমারের ভেতরেই বাসস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে অথবা দেশে ফিরতে না পারায় বাংলাদেশের জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে আটকা পড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা এমন এক সংকট, যার কোনো ত্বরিত সমাধান নেই এবং মূল কারণ নিরসনে সমন্বিত প্রচেষ্টা না নেওয়া হলে এর সমাধানে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিজেদের ঘর-বাড়ি ও সমাজ থেকে বিতাড়িত হওয়া রোহিঙ্গারা এখন ভাসমান সম্প্রদায়ের মানুষ। স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে নতুন করে হুমকির মুখোমুখি হওয়া এই মানুষগুলো তাদের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধ, খুবই সীমিত আকারের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ এবং মানবিক সহায়তার ওপর তাদের ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে পড়ারমতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে রাখাইনে সহিসংতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তা শরণার্থীদের জন্য মিয়ানমারে তাদের আগের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা, নাগরিকত্ব, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সুযোগসহ একটি সুন্দর ভবিষ্যতের সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ম্যানুয়েল ফন্টেইন।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের অনেক অংশে প্রবেশাধিকার না থাকায় ইউনিসেফ ও অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। ইউনিসেফ বলছে, অবিলম্বে এবং নির্বিঘ্নে এসব শিশুর কাছে পৌঁছার সুযোগ দেওয়া অপরিহার্য। একই সঙ্গে আন্তঃসাম্প্রদায়িক উদ্বেগ চিহ্নিত করতে এবং সামাজিক সহাবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরতে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাও অপরিহার্য।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারের নেতৃত্বে ও নজরদারিতে সহায়তা প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিপর্যয় এড়ানো গেছে, যেখানে স্থানীয় অধিবাসীরা ৭৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। ইউনিসেফ পানির কূপ খনন, কয়েক হাজার ল্যাট্রিন স্থাপন এবং শিশুদের কলেরা, হাম ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় সহায়তা প্রদানে ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist