শাহ্জাহান সাজু

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়তে ১৫ কোম্পানিকে নির্দেশ

* আগামী জুনের মধ্যে সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে হবে * পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে অর্থ মন্ত্রণালয়

পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানির শেয়ার আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ার দ্রুত বাজারে ছাড়তে চায় সরকার। উদ্দেশ্য পূঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা আনা। এজন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগের ১৫ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার কর্মপরিকল্পনা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এখলাছুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে সরকারি ১৫ কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে কোম্পানিগুলোকে আগামী জুনের মধ্যে দেশি/বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে লোকসান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে বলা হয়েছে। ওই বৈঠকে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় ১৫ কোম্পানিকে কিভাবে মুনাফামুখী করা যায় তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে ১৫ কোম্পানিকে আগামী জুনের মধ্যে সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বৈঠকে বলা হয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলো মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই সেগুলোর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নসহ মুনাফামুখী করার জন্য পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোড করার কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে হবে। তবে এর আগে কোম্পানিগুলো নিজেদের লোকসানের কারণ চিহ্নিত করতে দেশি/বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দেবে। দেশি/বিদেশি ওই পরামর্শকরা লাভজনক না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করবেন। তাছাড়া লাভজনক কিভাবে করা যায়, সে জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোম্পানিগুলো কাজ করবে। এক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছে, এতে লোকসানে থাকা ওই কোম্পানিগুলো দ্রুত লাভে ফিরবে। লাভে ফেরার পরই পুঁজিবাজারে অফলোডের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জানা যায়, বৈঠকে আলোচিত লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের নয়টি, বিদ্যুৎ বিভাগের চারটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগের দুইটি কোম্পানি রয়েছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অধীনে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে, লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস টিএন্ডটি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে থাকা কোম্পানিগুলো হলো- পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডে। এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কোম্পানিগুলো হলো- টেলিটক বাংলাদেশ লি: এবং বিটিসিএল। বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লি: এবং টেলিফোন শিল্প সংস্থার শেয়ার আগামী জুনের মধ্যে দ্রুত অফলোডের বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, সরকারি ২৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোড করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০৮ সালে। তারপর প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও অফলোড হয়নি সবগুলো কোম্পানির শেয়ার। দফায় দফায় বৈঠক করেও ২৬ প্রতিষ্ঠানের সবগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোড করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে সরকারি ওইসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এই কোম্পানিগুলোর সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করে লাভজনক পর্যায়ে নিতে এবং ওইগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে অবমুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এজন্য দফায় দফায় সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো নানা কারণ দেখিয়ে শেয়ার বাজারে ছাড়তে পারেনি। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়, কোম্পানি লোকসানে আছে বা সম্পদের মূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। আবার কখনো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইত্যাদি। জানা যায়, শেয়ার না ছাড়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর অনীহা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করা হয়েছে বৈঠকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist