গাজী শাহনেওয়াজ
জেলা সম্মেলনের পর ইসির নির্বাচনের প্রস্তুতি
জেলা সম্মেলন ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠার পর নির্বাচন কমিশনের প্রথম এই উদ্যোগে বাড়তি অনুপ্রেরণা খুঁজে পাচ্ছেন কর্মরতরা। এই সম্মেলন ও আরো কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর ঘোষিত হবে নির্বাচন বার্তা। এপ্রিলের শুরুতে ঢাকায় এ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।
সম্মেলনটি দুটি স্তরে সাজানো হয়েছে। জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে ইসির মাঠ কর্মকর্তারা। নির্বাচনী ফলাফল গেজেটে প্রকাশ নিয়ে মাঠ কর্মকর্তা ও সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে সাংবিধানিক এ সংস্থাকে। সময়ে সময়ে ‘কোর্ট অব কনটেন্ট’ এর শিকার হচ্ছেন তারা। এসব বিষয় নিয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের মতামত শুনবে কমিশন।
অন্যদিকে, জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে কমিশনকে সহায়তায় পাশে থাকে কয়েকটি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহিংসতামুক্ত রাখতে বড় ভূমিকা থাকে পুলিশ প্রশাসনের; এর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে, সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হন ডিসিরা, তাই জনপ্রশাসনকে এবং ভোটার তালিকার পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা করা হয় প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, এর জন্য প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এই সম্মেলনে। স্থানীয় সরকারের সীমানা বিন্যাসের কাজ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু সীমানা-সংক্রান্ত মামলায় নির্বাচন বন্ধ হলে বাদী হয়ে যায় কমিশন। এ-সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে ওই মন্ত্রণালয়কে ডাকা হচ্ছে এই সম্মেলনে।
জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, কমিশনের মাঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী একটা জেলা সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছি; এবারই প্রথম এই সম্মেলন হবে। আগামীতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই এই আয়োজন করা হবে। সম্মেলনের সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও ভোটার তালিকা, স্মাটকার্ড বিতরণ এবং সর্বোপরি নির্বাচন করতে মাঠ কর্মকর্তারা কি ধরনের সমস্যায় পতিত হন মূলত এখানে এসব নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি, নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন সম্পৃক্ত কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকে; আমাদের চিন্তা রয়েছে ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে, যাতে মাঠ কর্মকর্তাদের সমস্যা শুনে তারা তাৎতক্ষণিক কিছুটা সমাধান দিতে পারেন।
সচিব আরো বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সচিবালয়ের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের উইংগুলোর মধ্যে সমন্বয় রয়েছে, আসন্ন সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারেÑ এটাই মূল লক্ষ্য। আগামী এপ্রিলে সম্মেলনটি হওয়ার কথা রয়েছে, যোগ করেন ইসি সচিব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন যুগ্মসচিবসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি একতরফা হওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলসহ বড় একটি জোট নির্বাচন বর্জনের কথা মুখে বললেও শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবে তারা এমনটাই আশা কমিশনের। ফলে সব দল একত্রে নির্বাচনে এলে ইসির চ্যালেঞ্জ অনেক বেড়ে যায়।
তারা আরো বলেন, জেলা সম্মেলন সচিবালয় ও মাঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় দূর করার কথা জোরেশোরে বলা হলেও দিন শেষে ঘুরে ফিরে চলে আসে সরকার পরিবর্তনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আলোচনা-সমালোচনা থাকে এ নির্বাচন ঘিরে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাজে দায়িত্বশীল হওয়ার বার্তা দেওয়ার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তাদের করণীয় কি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যভাগের পর শুরু হয়ে যাবে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট এই পাঁচ সিটির নির্বাচনে ভোটের আয়োজন। পাশাপাশি শুরু হয়ে যাবে জাতীয় সংসদ ও পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের মালামাল কেনার প্রস্তুতি। এর আগেই সম্মেলনটি শেষ করতে চলছে জোর প্রস্তুতি। সময়ের স্বল্পতার কারণে অনেক কাজ করতে হচ্ছে চটজলদি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা সম্মেলন আয়োজন-সংক্রান্ত সভা করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে সচিবালয়। চিঠিতে আগামী ১১ মার্চের মধ্যে তাদের অধীনস্তদের নির্বাচনসহ সব পর্যায়ের সমস্যা ও সমাধান সমন্বিত করে লিখিত প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছে। তাদের পাঠানো মতামত নিয়ে মার্চের শেষ সপ্তাহে পরবর্তী বৈঠক করবে কমিশন।
মাঠ কর্মকর্তাদের নির্বাচন বিষয়ে আলোচিত ও স্পর্শকাতর মতামতগুলো এজেন্ডাভুক্ত করা হবে এবং সম্মেলনে ওই বিষয়ে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেবে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান. মো. নুরুল হুদা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
সম্মেলন-সংক্রান্ত চিঠি প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, জেলা সম্মেলন বিষয়ে বিস্তারিত তিনি কিছু জানেন না। আর চিঠি প্রাপ্তির বিষয়ে বলেন, এখনো পায়নি, আশা করছি, রোববার প্রথম কর্মদিবসে পেয়ে যাব।
আগামী নির্বাচনের বার্তা-সংক্রান্ত এই সম্মেলন কি না জানতে চাইলে একজন উপসচিব বলেন, নির্বাচন পরিচালনা, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা এবং সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাধা দূর করা এই সম্মেলনের একমাত্র ও প্রধান লক্ষ্য। আমাদের কাছে এটি কাজে সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে উঠার সম্মেলন এবং আপনাদের কাছে আগামী নির্বাচনের র্বার্তা; যেটা ধরে নেবেন তাই।
উদাহরণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থানীয় নির্বাচনের সীমানা বিন্যাস করে কমিশনকে অনুরোধ জানায় সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তফসিল ঘোষণা করে ইসি। কিন্তু দেখা যায়, স্থানীয় সরকারের সীমানা বিন্যাস চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা হলে পক্ষ হয়ে যায় কমিশন। সম্মেলনে ওই বিভাগের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে, এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যার জন্য। দায় কার সেখানে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আর নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বড় ভূমিকা থাকে। দেখা যায়, শক্তিশালী পক্ষকে নির্বাচনে সহায়তা করছে পুলিশ, এতে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠলে পুরো দায় এসে পড়ে কমিশনের ওপর। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কাজ করে পুলিশ, এ বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। একইভাবে, নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা নিরপেক্ষ রাখতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রাখা হতে পারে এ সম্মেলনে। আর ভোট পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি থাকে সেটা হলো নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হয় সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার। তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব অবহেলায় কমিশন না প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাস্তি দেবে সম্মেলনে এ বিষয়ের অস্পষ্টতা দূর হবে, এমটাই বলা যায়। তবে সবকিছু প্রাথমিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে স্বীকার করেন ওই কর্মকর্তা।
"