জুবায়ের চৌধুরী
ছাপা প্রশ্নপত্র বাদ : পরীক্ষার হলে ডিজিটাল ডিভাইসে ভেসে উঠবে প্রশ্ন
ফাঁস ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষায় ছাপার অক্ষরের প্রশ্নপত্র আর থাকছে না। ডিজিটাল ‘প্রশ্ন ব্যাংকের’ মাধ্যমে অনলাইনে অটোমেটিক (স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাৎক্ষণিক) প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নের ‘কোড’ জানিয়ে দেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ আসনে বসলেই একটি করে ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া হবে। পরীক্ষা শুরুর আগে ডিভাইসে অটোমেটিক প্রশ্ন ভেসে উঠবে। তা দেখেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে নতুন এই পদ্ধতি চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা থেকে পদ্ধতিটি চালু হবে। এই পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে সেমিনারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে বলে শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, দেশের নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে উন্নত করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চাই। আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য চাই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নতুন শিক্ষাব্যবস্থা। বিশ্বমানের শিক্ষা, বিশ্বমানের প্রযুক্তি, বিশ্বমানের জ্ঞান ও দক্ষতাÑ তবেই সম্ভব আমাদের এই প্রজন্মকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এমন পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না, বিতরণও করা হবে না। তাহলেই ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
অন্যদিকে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন বলেন, আগামী বছর থেকে কোনো প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। হয়তো কোনো ডিভাইস দিয়ে সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি, প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার যে প্রক্রিয়া এখন আছে, এ পদ্ধতিতে কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব হবে না।’
এদিকে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ছয়টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসে আইসিটি বিভাগ, মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে শিক্ষা বোর্ডের নির্বাচিত অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৩২ জন প্রশ্ন ‘সেটার’ নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা ৩২ সেট প্রশ্ন তৈরি করেন। সেখান থেকে মডারেটর যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষার উপযোগী করে ১২ সেট প্রশ্ন তৈরি করে সিলগালা করে বোর্ডে জমা দেন। তারপর বোর্ড থেকে সিলগালা অবস্থায় প্রাপ্ত প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে কম্পোজ ও এডিট করে ছাপানো হয়। এরপর প্যাকেটজাত ও সিলগালা করা হয়। বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রওয়ারি প্রশ্নপত্র ট্রাঙ্কে ভরা হয়।
ট্রাঙ্কগুলো সিলাগালা করে বিজি প্রেসে সংরক্ষণ করা হয়। জেলা প্রশাসকের মনোনীত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্দিষ্ট দিনে ট্রাঙ্কগুলো বিতরণ করা হয়। পুলিশ পাহারায় ট্রাঙ্কজাত প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়। পুলিশ পাহারায় জেলা ট্রেজারিতে নিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। পরীক্ষার দিনে ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে প্রশ্ন নেওয়া হয়। এরপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় অন্তত ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা জড়িত থাকেন। ফলে প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরীক্ষা নেওয়া পর্যন্ত কয়েক ধাপে প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে, ১৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।’ এমসিকিউ (নৈর্ব্যক্তিক) বাতিল প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন তা আমাদের জন্য নির্দেশ। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধ করতে হয় সেই প্রক্রিয়ায় আমরা তা বাতিল করব। হঠাৎ করে কিছু বলতে পারব না।’
"