রাজশাহী ও নাটোর প্রতিনিধি

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

রাজশাহীর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ উন্নয়ন নিয়ে আসে আর বিএনপি দেয় লাশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ আপনাদের জন্য উন্নয়ন নিয়ে আসে আর বিএনপি-জামায়াত উপহার দেয় লাশ। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময় রাজশাহী ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের এলাকা। তারা তৈরি করেছিল বাংলা ভাই। বিএনপি-জামায়াতের সময় বিভিন্ন হামলার শিকার হয়েছে রাজশাহীর মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সকালে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ষষ্ঠ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান বলেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর জনসভায় বলেন, বিএনপি চোরের জন্য আন্দোলন করছে, খালেদা জিয়ার দুই ছেলের দুর্নীতিও এখন প্রমাণিত। বিএনপির আমলে মানুষ অভয়ে চলতে পারত না, ঘর থেকে বের হতে পারত না। রাজশাহীকে তারা ত্রাসের নগরীতে পরিণত করেছিল। তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি, করেছে বোমাবাজি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়েছে। কারণ, ৯১ সালে এতিমখানা তৈরি করবে বলে বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। কিন্তু এতিমখানা কই? কেউ ঠিকানা জানে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, সেই টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। এখন বলে টাকা তো আছে, টাকা তো বেড়েছে। কিন্তু এই টাকা কে ভোগ করেছে?’। বিএনপি নেতারা আন্দোলন করে। কিসের আন্দোলন? টাকা চুরি করে নেত্রী জেলে গেছে। আন্দোলন চোরের জন্য? ‘এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছে। ২৭ বছর এতিমের ভাগ এতিমকে দিতে পারেনি। সে টাকা নিজের কাছে রেখে গিয়েছে।’

বিএনপি সরকার আমলে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। বিএনপির সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিভাবে মানুষ কষ্ট করেছে আমরা দেখেছি। এই রাজশাহীতে তারা আপনাদের দিয়েছিল লাশের উপহার।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য প্রফেসর ড. আবদুল খালেক ও প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আকতার জাহান, আওয়ামী লীগেরর কেন্দ্রীয় সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। চলতি মেয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীতে দ্বিতীয় সফর।

রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হলো- ১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পুঠিয়ায় বারনই নদীতে ড্যাম নির্মাণ, দুই কোটি ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী (নর্থ) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ, এক কোটি ৫১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নওহাটা ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট নির্মাণ।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের পাঁচ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, শহীদ কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের পাঁচ তলা একডেমিক ভবন নির্মাণ, দামকুড়া হাট কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, আড়ানী ডিগ্রি কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, তানোর আবদুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, বাগমারা কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, বিড়ালদহ কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, রাজশাহী মহানগরীর নবনির্মিত আটটি থানা ও গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভা শেষে বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফেরেন।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, সকালে নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ষষ্ঠ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান বলেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। আমরা চাই দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকুক।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র সংবিধান এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। রামু ও উখিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির সংস্কারে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা এবং নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য সার্বজনীন আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সেনা সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভ‚মিকা দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী সকালে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তাকে স্বাগত জানান। পরে একটি সুসজ্জিত সেনা সদস্যদের গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে তিনি বক্তব্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। বক্তব্য শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি চৌকস সেনা দলের কুচকাওয়াজ ও সালাম গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে এসে পৌঁছান। পরে ১১ টা ৩৩ মিনিটে তিনি তার বক্তব্য শুরু করেন। প্রায় ২৭ মিনিট বক্তব্য শেষে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কনফারেন্স রুমে সেনা সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে তিনি বেলা আড়াইটায় তার সম্মানে দেওয়া প্রীতিভোজে অংশগ্রহণ শেষে রাজশাহীর উদ্দেশে আকাশ পথে রওনা দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist