প্রতীক ইজাজ

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

এবার আইনি লড়াই উচ্চ আদালতে

* জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের কপি মিলেছে * ৬০ দিনের মধ্যে আপিল ও আপিলের বিরোধিতা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর সাজার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়া গেছে। রায় ঘোষণার ১০ দিন পর গতকাল সোমবার মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এবং মামলার বাদী পক্ষ দুর্র্নীতি দমন কমিশন ও দন্ডিত আসামি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের হাতে এই অনুলিপি পৌঁছেছে। এখন খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফে আপিল ও সে আপিলের বিরোধিতা করে বিএনপি, রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে যাবেন। সেখানে শুরু হবে আরেক দফা আইনি লড়াই।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নিম্ন আদালতের রায় হাতে পাওয়ার পর রায়টি পর্যালোচনা করে এর ঘটনাগত ও আইনগত দুর্বলতা খুঁজে বের করা হবে। এরপর এসব গ্রাউন্ডের ওপর ভিত্তি করে আপিল ও আপিলের বিরোধিতা ফাইল করা হবে। আইন অনুযায়ী, রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। তবে এই দিন গণনা হবে রায়ের অনুলিপি দেওয়ার দিন থেকে। অর্থাৎ গতকাল থেকে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে এ আপিল করতে পারবে উভয় পক্ষ।

এর ফলে রায়ের অনুলিপি নিয়ে শুরু হওয়া রাজনীতিতে নানা আলোচনার অবসান হলো। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারের বিশেষ এজলাসে বসে দুদকের এই মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান। জনাকীর্ণ এজলাসে তিনি শুধু রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়েছিলেন। তারপর থেকে রায়ের অনুলিপি না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, খালেদা জিয়াকে বেশি দিন বন্দি রাখতেই রায়ের অনুলিপি দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে বলছিলেন, রায়ের অনুলিপি পেতে বিএনপি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারকের কাছে আবেদন জানাতে দেরি করেছে।

এই বিতর্ক চলার মধ্যে রোববার আখতারুজ্জামানের দ্বারস্ত হন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তিনি সোমবার তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে গতকাল সোমবার বিকালে আখতারুজ্জামানের আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেনের কাছ থেকে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল ও দুদকের আইনজীবী খোরশেদ আলম।

অনুলিপি পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, আজ আপিল ফাইল করবেন তারা। পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, অনুলিপি পর্যবেক্ষণ করে বিএনপির আপিলের বিরোধিতা করা হবে কিনা, তা কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে রায় ঘোষণার পর পরই দুদকের এই আইনজীবী বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিরোধিতা করবেন তারা। এছাড়া রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে তারও বিরোধিতা করবে সংস্থাটি।

আইনজ্ঞদের মতে, রায়ের অনুলিপি দেওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করতে পারবেন। সেখানে পৃথকভাবে জামিনের আবেদন করা যাবে। আপিল করলে ওই আপিল আবেদন গ্রহণ করার পর জামিনের আবেদন শুনানি করতে পারবেন। হাইকোর্ট ইচ্ছা করলে প্রথম শুনানিতেই জামিন দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন। এটা হাইকোর্টের এখতিয়ার। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় বলা হয়েছে, আপিলকারী কারাগারে আটক থাকলে আপিল আদালত তাকে জামিন দিতে পারেন।

অবশ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো আপিল আবেদন পড়ে আপিল আদালত যদি সন্তুষ্ট হন যে নিম্ন আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করার পর্যাপ্ত কারণ নেই, তাহলে আপিল আবেদন দায়েরের পরই তা খারিজ করতে পারেন। তবে আপিলকারীর আইনজীবীকে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দিতে হবে।

আইনজ্ঞরা আরো জানান, দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তি করার বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৩-এর (খ) ধারায় বলা হয়েছে, দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে আপিল আদালত দন্ডাদেশ পরিবর্তন করতে পারবেন। আসামিকে খালাস বা অব্যাহতি দিতে পারবেন। এখতিয়ারাধীন কোনো আদালতকে পুনর্বিচার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। দন্ডাদেশ বহাল রাখতে পারবেন বা দন্ডাদেশ কমাতে পারবেন। দন্ডের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে দন্ড বৃদ্ধি করতে পারবেন না।

তবে খালেদা জিয়া আপিল করলেও আপিল গ্রহণ করা বা না করার এখতিয়ার হাইকোর্টের রয়েছে। আবার গ্রহণ করার পর শুনানি শেষে উপরোক্ত আদেশের যেকোনো একটি দিতে পারেন বলেও জানান আইনজীবীরা।

আইন অনুযায়ী, সাধারণত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে জামিনও দেওয়া হয়। তবে আপিলের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির সময় জামিন দিতেও পারেন, আবার কয়েক দিন পরও দিতে পারেন আদালত। এ কারণে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না, কত দিনে তিনি জামিন পাবেন।

ফৌজদারি এই মামলায় দন্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারা, না পারার বিষয়টিও এতে যুক্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপি নেতারা আশা করছেন, আপিলে সাজা স্থগিত হলে তাদের নেত্রী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা এখন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। এই দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদন্ড দেন আদালত। এছাড়া মামলায় অন্য আসামি তার ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচজনকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist