নিজস্ব প্রতিবেদক
‘সিমেন্টের বদলে কাদামাটি!’
ডিএসসিসির দুই প্রকৌশলী বরখাস্ত
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের উপাদান ব্যবহারের দায়ে সংশ্লিষ্ট কাজের তদারকের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান এবং উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফরিদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে এন্টারপ্রাইজকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন এলাকায় যেসব কাজ করেছে সেগুলোর গুণগত মান পরীক্ষার জন্য বুয়েট এবং এলজিইডিকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সিমেন্টের বদলে কাদামাটি! শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ। প্রকাশিত সংবাদটিতে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নতুন যুক্ত হওয়া ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদবাগ চৌরাস্তার ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনের ড্রেন নির্মাণে সিমেন্টের পরিবর্তে কাদামাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, চাকদাহ, ঢাকা ম্যাচ, রাজউক দ্বিতীয় পর্ব, ওয়াসা কলোনি, মুন্সীখোলা তেলকল, পূর্ব কদমতলী, মোহাম্মদবাগ ও মেরাজনগর নিয়ে ডিএসসিসির ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডটি গঠিত। সম্প্রতি এ ওয়ার্ডটিসহ শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া এলাকায় ৭৩৪ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র সাঈদ খোকন। এরই অংশ হিসেবে প্রধান সড়কগুলোর পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। সংস্থার অর্থায়নে এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে কে এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ড্রেন নির্মাণ কাজটি করছেন ঠিকাদার গোফরান চৌধুরী।
মোহাম্মদবাগ চৌরাস্তা থেকে মিরাজনগর যাওয়ার রাস্তাটির মাঝের এলাকায় ন্যাশানাল ব্যাংকের নিচে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। গত শুক্রবার রাতে ড্রেনের কিছু অংশ ঢালাই করা হয়। পরদিন শনিবার সকালে ঢালাইয়ের প্রলেপ খুলতে গেলে দেওয়ালে ফাটল ধরে। পরে স্থানীয়রা ধরতে গেলে তা ভেঙে পড়ে। দেখা যায় সিমেন্ট নয়, ব্যবহার করা হয়েছে কাদামাটি। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে তারা লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কাদামাটির প্রলেপ তুলে ফেলেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে প্রতিদিনের সংবাদ।
প্রতিদিনের সংবাদে ওই সংবাদ প্রকাশের পর সংস্থার মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে বলা হয়েছেÑ বর্ণিত কাজের সুপারভিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রকল্প পরিচালক ও কনসালটেন্ট দলনেতাকে কারণ দর্শানের পত্র দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে এন্টারপ্রাইজ ডিএসসিসির নব সংযুক্ত ৪টি ইউনিয়নের চলমান কাজ ও মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কাজের গুণগত মান, ব্যবহৃত মালামাল ও পরিমাণ সম্পর্কে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এলজিইডি এবং বুয়েটকে অনুরোধ পত্র দেওয়া হচ্ছে। ডিএসসিসির ৪টি ইউনিয়নের চলমান প্রতিটি কাজের গুণগত মান মালামাল ও পরিমাণ তথা প্রতিটি কাজ প্রাক্কলন ও ডিজাইন অনুযায়ী, সম্পন্ন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ/গাফলতি পরিলক্ষিত হলে, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সংস্থার মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘সংবাদটি আমাদের নজরে আসার পর আমরা বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সাময়িক বরখাস্ত করেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
"