প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘট চলাকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে।এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিদি ও ব্রুরোর পাঠানো প্রতিবেদন:
শাবি প্রতিনিধি জানান, ছাত্র ধর্মঘট চলাকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এতে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সাত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এ ঘটনা ঘটে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের অংশ হিসেবে সকাল ৮টা থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের মূল ফটকে অব¯’ান নেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টায় সমাবেশের শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির দোহাই দিয়ে সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা হামলা চালান। এতে শাখা ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাজিরুল আযম বিশ^াস, নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবাইয়াৎ আহমেদ, কর্মী জয়দ্বীপ দাশ, মঈনুদ্দিন মিয়া, শুভম ঘোষসহ অন্তত সাতজন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত জয়দ্বীপ দাশ ও শুভ ঘোষ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গেট দিয়ে ঢুকতে চাইলে তারা বাধা দেয়। এতে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। তাদের হামলায় সাব্বির হোসেন নামে আমাদের কর্মী আহত হয়েছেন।’ তবে শাখা ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ রুদ্র বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা বিনা উসকানিতে হামলা করেছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। ঘটনায় জড়িতদের তদন্তসাপেক্ষে ব্যব¯’া নেওয়া হবে।’
হামলায় জড়িত কেউ ছাত্রলীগের নয় : ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ হামলায় জড়িত কেউ ছাত্রলীগের নয় বলে জানান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান। তিনি দাবি করেন, ‘হালাকারীরা ছাত্রলীগের কেউ নন, তাই এ হামলার দায়ভার শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেবে না। শাবিপ্রবি ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে কিছু দুষ্কৃতকারী ও অতি উৎসাহীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানা”িছ।’
চট্টগ্রামে ছাত্রজোটের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা:চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়,চট্টগ্রাম নগরে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিল-সমাবেশে ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই দফা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে নিউমার্কেট এলাকায় এ হামলার ঘটনায় অন্তত ছয়জন আহত হন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রগতিশীল ছাত্রজোট ধর্মঘটের সমর্থনে কোনো মিছিল-সমাবেশ করেনি। তবে ধর্মঘট প্রতিরোধে ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অব¯’ান ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল সোমবার দুপুরে নগরের নিউমার্কেট মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুলের সামনে থেকে মিছিল বের করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রথম দফা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পরে এই হামলার প্রতিবাদে প্রগতিশীল জোটের নেতারা নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করলে সেখানে দ্বিতীয় দফায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাসদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। হামলার সময় পুলিশের একটি দল সেখানে উপ¯ি’ত ছিলেন। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেফতার হয়নি।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল কবির বলেন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিলে সামান্য সমস্যা হয়েছিল। বড় কিছু হয়নি। পরি¯ি’তি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রগতিশীল ছাত্রজোট ধর্মঘটের সমর্থনে কোনো মিছিল-সমাবেশ করেনি সোমবার। তবে ধর্মঘট প্রতিরোধে ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অব¯’ান ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট পালনের ডাক দেন। তবে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ধর্মঘটের সমর্থনে শহর শাখার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিছিল ও সমাবেশ করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর টিপু বলেন, যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোড়ে মোড়ে অব¯’ান নিয়েছিল। ছাত্রলীগ অযৌক্তিক কোনো ধর্মঘট মানে না। তাই আগে থেকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
চবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ধীষন চাকমা বলেন, ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ না করার বিষয়টি আমাদের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে।
প্রসঙ্গত, ছাত্রী নিপীড়নে অভিযুক্তদের বহিষ্কারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে গত ২৩ জানুয়ারি প্রায় চার ঘণ্টা আটকে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিকেলে লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে উদ্ধার করেন উপাচার্যকে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করেন, আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তারা পিতৃতুল্য উপাচার্যকে উদ্ধার করেছেন। ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘটের ডাক দেয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
জাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ধর্মঘট পালিত :জাবি প্রতিনিধি জানান,সারা দেশে বাম নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ডাকা দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্মঘট পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধর্মঘট পালিত হয়।
ধর্মঘটের অংশ হিসেবে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা পুরনো কলাভবন, নতুন কলাভবন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ফটক বন্ধ করে সামনে অব¯’ান গ্রহণ করেন। এসব অনুষদের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে অব¯’ান করছেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে প্রগতিশীল জোটের নেতাকর্মীরা সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে পুরনো কলাভবন পর্যন্ত একটি মিছিল করেন। মিছিল শেষে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের মধ্য দিয়ে ধর্মঘট শেষ হয়। জোট নেতা মাসুক হেলাল অনিক বলেন, ‘আমরা ভোরে বাস আটকানোর মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেছি। এরপর আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি অনুষদে ও বিভাগে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আমাদের সঙ্গে ধর্মঘটে শামিল হতে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা সাড়া দিয়েছেন। দু-একটি বিভাগ ছাড়া কোনো বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি।’
"