পাঠান সোহাগ
অমর একুশে বইমেলার বাকি এক দিন
এবারও কাজ বাকি রেখেই উদ্বোধনের তোড়জোড়!
আর এক দিন পর অমর একুশে বইমেলার আসর বসছে। তবে এখনো চলছে স্টল তৈরির কাজ। গতি থাকলেও প্রতিটি স্টলের কাজ এখনো ৫০ শতাংশই শেষ হয়নি। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও কাজ বাকি রেখেই চলছে উদ্বোধনের তোড়জোড়। আর এ নিয়ে লেখক, কবি, সাহিত্যিক, দর্শনার্থী ও ক্রেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, এখনো স্টলের কাঠামো দাঁড় করানোর কাজ চলছে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে কাজ শেষ হবে কবে?
এ বিষয়ে আয়োজক কমিটি বলছে, প্রতি বছর এই সময়ে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মযজ্ঞ থাকে। প্রথম সপ্তাহে দর্শনার্থী ও ক্রেতা কম থাকায় প্রকাশকরা একটু সময় নেন। তাই এ রকম হয়েই থাকে। তবে সামান্য কাজ বাকি থাকলে তা শুরু হওয়ার দু-এক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
সরেজমিন গতকাল বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, জোরেশোরেই চলছে স্টল তৈরির কাজ। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ পেরেক মারছেন আবার কেউ রঙের কাছে ব্যস্ত। কেউ ব্যানার টানাচ্ছেন, স্টলে ভেতর বইয়ের সেলফ বসানোর কাজ করছেন। বিদ্যুৎ, লাইটিং করার কাজও চলছে বেশ দ্রুতগতিতে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে রাস্তা রিপিয়ারিংয়ের কাজ। বালু ও ইট বিছিয়ে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। শিশুদের বিনোদনের জন্য হচ্ছে মিনি পার্ক।
স্টল নির্মাণে কাজ করছেন কাউসার। তিনি বলেন, ‘৪০ ভাগের মতো কাজ বাকি রয়েছে। বাকি কাজ দু-তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ অন্য আরেক স্টলের কর্মী শরিফ বলেন, ‘প্রতিদিনই কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে, দ্রুত কাজ শেষ হবে। খুব বেশি সময় লাগবে, তা না।’ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুস সালাম বলেন, ‘প্রতি বছরই প্রায় প্রতিদিন মেলায় আসি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে সময়মতো কাজ শেষ না হলে মেলায় গিয়ে মজা পাওয়া যায় না। গত বছর প্রথম পাঁচ-সাত দিন মেলায় গিয়ে মজা পাইনি। এ বছর একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। মেলার কাজ এখনো শেষ হয়নি।’ সময় প্রকাশনীর মালিক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘বইমেলার পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজের পরিধিও বেড়েছে। কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। আমাদের কাজ সময়মতো শেষ হবে। তবে যেসব প্রকাশনী স্টলের কাজ দেরিতে শুরু করেছে, তাদের একটু বেশি সময় লাগবেÑএটাই স্বাভাবিক।’
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। প্রকাশনী সংস্থা স্টলগুলোতে তাদের নিজস্বতা আনতে কাজ করছে। সব কাজ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে। তবে সামান্য কাজ বাকি থাকতে পারে, সেটা মেলা শুরুর দু-এক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবার আশা করছি গতবারের তুলনায় কিছু বেশি বই আসবে। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বিভিন্ন অঙ্গনের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। তাদের কথাই বিবেচনা করে এবারে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।’
এ বছর মেলায় ইউনিট, প্যাভিলিয়নসহ অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলা একাডেমিসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিসর বাড়ানো হয়েছে। বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত মেলায় প্রতি বছরের তুলনায় এবার পাঠক সমাগম বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আরো বলে, বইমেলায় মাসব্যাপী থাকছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে সেমিনার, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, প্রকাশনা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া বিনোদনের জন্যও রয়েছে নানা আয়োজন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
"