নিজস্ব প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অসন্তোষ নিজ দেশে ফিরতে দ্বিধা

প্রত্যাবর্তন চুক্তির দুই মাস পূর্ণ হলো আজ

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে দুই মাসের মধ্যেই তাদের ফেরত পাঠানোর কথা। আজ ২৩ জানুয়ারি দুই মাস পূর্ণ হলো। কিন্তু শুরু হলো না রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো কার্যক্রম। মিয়ানমার এই বিষয়ে তাড়াহুড়ো করলেও বাংলাদেশ ধীরে চল নীতিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অসন্তোষ বাড়ছে। রাখাইনে ফেরার বিষয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। আদৌ ফেরত যেতে পারবে কি না সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে মিয়ানমারে বাড়িভিটা হারানো এই উদ্বাস্তুরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু তাদের এখনই দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। আপতত আরো কিছু দিন সময় লাগবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, কেবল বিশ্বকে দেখানোর জন্যই চুক্তির দুই মাস পূর্ণ হওয়ার দিন নামমাত্র রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরু করতে চায় মিয়ানমার। কেননা মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও কীভাবে তাদের পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট করছে না দেশটি।

বাংলাদেশ চাইছে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেই প্রত্যাবাসনে যেতে, যাতে মাঝপথে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া থেমে না যায়। ফলে তাদের ফেরত পাঠাতে আরো এক থেকে দেড় সপ্তাহ লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, বাংলাদেশ চায়, প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ জনের প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ানো। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। এর জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি অনুযায়ী একেকটি পরিবারকে একক ইউনিট ধরে একটি ফরমের খসড়া প্রস্তুত করছে বাংলাদেশ। দু-এক দিনের মধ্যে খসড়াটি মিয়ানমারে পাঠানো হবে। মিয়ানমার এটি চূড়ান্ত করে ফেরত পাঠালে একক ইউনিট নির্ধারণের কাজ শুরু হবে। প্রক্রিয়া শেষ করে এই ফরম পূরণের কাজ শুরু করতেই আরো এক সপ্তাহের বেশি লাগবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যেসব প্রস্তুতির কথা তারা বলছেন সেটি বাংলাদেশের দিক থেকে নেওয়া পদক্ষেপ। কিন্তু বিষয়টি এক পাক্ষিক নয়, বরং দ্বিপাক্ষিক। যারা প্রত্যাবাসিত হবেন তারা সেখানে গিয়ে কী অবস্থায় থাকবেন। প্রত্যাবাসনের পর তারা কেমন থাকবেন, তাদের নিরাপত্তা কতদূর থাকবেÑ সেটাও আমাদের দেখতে হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এ কাজটি করবে। মিয়ানমারের দিক থেকেও তাদের প্রস্তুতির বিষয় আছে। উভয় দিক থেকে প্রস্তুতির বিষয়। তারা কিছু কাজ করেছে বলে জানিয়েছে। সেগুলোও দেখতে হবে আমাদের।

তিনি আরো বলেন, আমরা যদি প্রত্যাবাসনকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, তাহলে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা যে, কোন নীতির ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হবে, দ্বিতীয় হলো কাঠামোগত প্রস্তুতি ও তৃতীয় হলো শারীরিক বা মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত প্রত্যাবাসন শুরু করা।

প্রত্যাবাসন কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, উভয় দিক পরিপূর্ণ প্রস্তুত হলেই প্রকৃত প্রত্যাবাসন শুরু হবে।

এদিকে প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এ বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। স্বদেশে ফেরা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে ফায়দা লোটা বিদেশি এনজিওগুলোর কর্তাব্যক্তিদের ভূমিকা বেশ রহস্যজনক হয়ে উঠছে। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বিঘœ করতে তারা পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছেÑএমন অভিযোগও উঠেছে দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলায় একের পর এক রোহিঙ্গা খুনের ঘটনাসহ নানা ধরনের জটিল সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় প্রত্যাবাসন সমস্যা হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রশাসন। এই নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) প্রত্যাবাসনের দাবিতে উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদ এক প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে।

প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গারা ইচ্ছুক হলেও বিভ্রান্তিমূলক ধারণা মাথা ঢুকিয়ে দিচ্ছে তথাকথিত এনজিওরা। নিরক্ষর রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর মনোভাব পাল্টে যাচ্ছে এ ধরনের উল্টোপাল্টা কথাবার্তায়। এখন ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করেছে।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রোহিঙ্গারা পাঁচ দফা দাবি সংবলিত ব্যানার, প্লে-কার্ড, ফেস্টুন নিয়ে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিদেশি এনজিও অফিসের সামনে স্লোগানসহ প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। এসব দাবি-দাওয়ার কথা দুই দেশের সমঝোতা চুক্তিতে স্পষ্ট থাকলেও এই দাবির কোনো ভিত্তি আছে কি না তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে এনজিও সংস্থাগুলোর অপতৎপরতা ও উসকানিমূলক ইন্ধনের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দেখভাল ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা এখনো হাতে আসেনি। তবে কোন কোন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে তার কাজ চলছে। গত শুক্রবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনবিরোধী ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদের খবর পেলে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত ক্যাম্প এলাকায় গিয়ে তদন্ত করে দেখে এবং প্রশাসন যাওয়ার আগেই তারা সরে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। যেসব এনজিও রোহিঙ্গাদের ভুল ধারণা দিয়ে উসকে দিচ্ছে সেগুলোকে তালিকা করে ব্যবস্থা নেওযার জন্য সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist