গাজী শাহনেওয়াজ

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৮

আলোর মুখ দেখছে না ইসির অনেক ভালো উদ্যোগ

ব্যক্তি পরিবর্তনে থমকে যায় সব সংস্কার

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাজে সহায়ক হবে এমন অনেক ভালো উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না। কারণ একজন ব্যক্তির নেওয়া পদক্ষেপ অন্যজন এসে গ্রহণ করেন না। ফলে পুরনো ও মান্ধাতার আমল থেকে চলে আসা নিয়মনীতির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে ইসির সবকিছু। অভিযোগ রয়েছে, সংস্কার কিংবা ইতিবাচক পদক্ষেপ যারাই নেন স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তাদের দফতর কিংবা সংশ্লিষ্ট পদ থেকে সরে যেতে হয়। বিদায়ী বছরে এমন দুজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। একটি ইসি সচিবালয়ে ও অন্যটি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে। তবে এটা নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই রেওয়াজ।

ধারণা পাওয়া গেছে, সংস্কার বা ফলপ্রসূ হবেÑএমন কার্যকরী চিন্তার উদ্ভব ঘটিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রথমে বাহবা পেয়ে থাকেন। এভাবে কাজটি ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগোতে থাকে। একটা পর্যায়ে পৌঁছানোর পর হঠাৎ ইসির একটি পক্ষ ওই ব্যক্তির নেওয়া ইতিবাচক কাজগুলোয় নাক গলানো শুরু করেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলা হয়। কাজটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসার পর কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওপর মহলকে ভুল বুঝিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট পদে নতুন ব্যক্তি এসে আগের জনের রেখে যাওয়া সব সংস্কার উদ্যোকে পাশ কাটিয়ে যান। এভাবে যুগ যুগ ধরে ইসির পরিবর্তনযোগ্য অনেক কার্যক্রম চলছে পুরনো ধাঁচেই। প্রাপ্ত তথ্যমতে, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা (হারানো কার্ড উত্তোলন, ভুল সংশোধন ও ভোটার এলাকা স্থানান্তর) দ্রুত প্রদানের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (ই-সিস্টেম) প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়, যা কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামে সর্বত্র পরিচিত। এটা বাস্তবায়ন করা হলে সব প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের হাতে সংশোধিত কার্ডটি পৌঁছাতে সময় লাগত মাত্র ৩০ দিন। অর্থাৎ আপডেট ভার্সনে এ আবেদন উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা প্রদানের পর মাত্র ১০ দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে, সেখানে মাত্র তিন কার্যদিবস পর্যন্ত থাকার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার (আরইও) কাছে এবং এখানেও তিন কার্যদিবস থাকার পর সিস্টেমে এটি অটোমেটিক্যালি মূল সার্ভার অর্থাৎ এনআইডি উইংয়ে অগ্রায়িত হবে। উপজেলা, জেলা এবং আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে ১৬ কার্যদিবস থাকার পর এইআইডিতে থাকবে ১০ কার্যদিবস। আর বাকি চার কার্যদিবসের মধ্যে পোস্ট অফিস কিংবা বিশেষ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলার মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে যেত, যেখানে সর্বসাকুল্যে সময় লাগত ৩০ দিন। কারণ এটি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। এটিতে থাকত না কাগজের ব্যবহার। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ সিস্টেমের নথি চলত, এতে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হতো। বর্তমানে এই কাজে ন্যূনতম সময় ৪৫ থেকে ৬০ দিন; ক্ষেত্রবিশেষে বছরও পেরিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক এ ধরনের ইতিবাচকসহ বেশ কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে কাজটি শেষ করার আগেই উদ্যোগের নেপথ্যের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জানা যায়, পদ থেকে তাকে সরানোর পরপরই এটার কার্যক্রম থমকে গেছে। এ ছাড়াও প্রবাসীদের ভোটার করা ও এনআইডি মুদ্রণে সহকারী পরিচালকদের ক্ষমতা অর্পণ ছিল ওই কর্মকর্তার চিন্তার ফসল।

এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে মান্ধাতার আমলের কাঠের সিলের বদলে ডিজিটাল পদ্ধতির সিল আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের উদ্যোগ নেন বর্তমান শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। ইসি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময়ে নমুনা সংগ্রহ করে শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে একটি সিলে সর্বোচ্চ দুই হাজার ব্যালটে ব্যবহার করা যেত। অথচ কাঠের তৈরি সিলে সর্বোচ্চ একটির বেশি নির্বাচনে ব্যবহার করা যায় না। এই কাজটির জন্য অতিরিক্ত কমিশনের ব্যয় হতো প্রায় দুই কোটি টাকা।

ইসির কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচনে ব্যবহার হওয়া মার্কিং এবং অফিশিয়াল সিল দুটির আকৃতি ছোট হলেও নির্বাচনের বৈধতার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। অফিশিয়াল সিলটি গোল আকৃতির হলেও ব্যালটের পেছনে এটি মারার পর ভোটকক্ষে দায়িত্বরত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার একটি অনুস্বাক্ষর থাকে। ফলে ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে অনেক সময় দুর্বৃত্তরা নিজ প্রার্থীর প্রতীকে সিল মেরে ব্যালটটি বাক্সে ফেলে গেলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোট গণনার সময় দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সিলে অনুস্বাক্ষর না থাকার কারণে ব্যালটটি বাতিল করতে পারেন। একইভাবে মার্কিং সিলের গুরুত্বও রয়েছে।

পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান ওই সময়ে বলেছিলেন, যুগ যুগ ধরে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে নির্বাচনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ কাঠের তৈরি সিল ব্যবহার হয়ে আসছে। দেখা গেছে, মূল্য কিছুটা কম হলেও একটির বেশি নির্বাচনে এগুলো ব্যবহার করার সুযোগ নেই। এবার ভোটে সিল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কমিশন ডিজিটাল চিন্তা করছে। এতে নির্বাচনের খরচ কিছুটা বাড়বে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল সিলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন চলছে যাচাই-বাছাই। চূড়ান্ত হওয়ার পর সব জট খুলে যাবে; উচ্চমূল্যের এই সিলগুলো শুধু সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে।

তবে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির জন্য সহায়ক এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যদের বিরাগভাজন হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষ ও সৎ সচিব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আবদুল্লাকে বিদায় নিতে হয়। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্বে আসেন হেলালুদ্দীন আহমেদ। আগের সচিবের রেখে যাওয়া পদক্ষেপ এড়িয়ে পুরনো সিস্টেমেই ফিরে যান। ফলে ব্যক্তি বদলের সঙ্গে সঙ্গে ইসির পুরো কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে।

একইভাবে ইসির জন্য সহায়ক নয়Ñএমন প্রযুক্তির উদ্ভব নিয়ে অতি উৎসাহ দেখা যায়। যার মধ্যে ইভিএম একটি। শুরু থেকে বিতর্ক তৈরি করা প্রযুক্তিটি সর্বশেষ ব্যবহার হওয়া রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও খারাপ নজির তৈরি করেছে। এই সিটির একটি ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রের ছয়টি কক্ষে ব্যবহার হওয়া প্রতিটি ইভিএমে ত্রুটি ধরা পড়ে। জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচন শেষ করার পরও ঢাকা সিটিতে ব্যবহারের ঘোষণা দেয় কমিশন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist