আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর

হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব : আস্থা তলানিতে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আজ। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প ছিলেন গণমাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রে। শপথ নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই হোয়াইট হাউসে শুরু হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। বছরজুড়েই ছিল এই অবস্থা। এদিকে, নানা ধরনের বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত নেয়ায় ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে। ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তির সময়ে তাকে নিয়ে লেখা ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দি ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ গ্রন্থটিতে এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এজন্য বইটি আলোচনায় সবিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হতে না হতেই ট্রাম্পের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের ওপর বিশ্ববাসীর আস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে এক জরিপে জানানো হয়েছে। কড়া মেজাজের অস্থিরচিত্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বছর শাসনামলেই তার জনপ্রিয়তা কমতে কমতে ৩০ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এক দশক আগে গ্যালাপ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল লিডারশিপ জরিপ চালায়। জরিপের সূচনা করার পর যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ্রোভাল রেটিং আর কখনই এত নিচে নামেনি।

এদিকে ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা বইটিতে দেখানো হয়েছে ট্রাম্পের পরেই হোয়াইট হাউসে ক্ষমতার ত্রিমুখী মল্লযুদ্ধের কথা। এদের মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্টের জামাতা জ্যারেড কুশনার। অপর দুজন হলেন চিফ অব স্টাফ রিন্স প্রিবাস, চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন। তাদের লড়াই ছিল চিফ অব স্টাফের প্রকৃত ক্ষমতা ধরে রাখা। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই চাইছিলেন না একক কাউকে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে। অন্যদিকে এই দ্বন্দ্বের বিপরীতে একেবারেই নির্লিপ্ত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ বইতে এসব তথ্যই উঠে এসেছে।

বইয়ের ‘অর্গ চার্ট’ অধ্যায়ে লেখক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর হোয়াইট হাউসে ওই তিন ব্যক্তির ক্ষমতার লড়াই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হোয়াইট হাউসের নির্বাহী দফতর ‘ওয়েস্ট উইং’য়ে প্রিবাস, ব্যানন এবং ট্রাম্পের জামাতা কুশনার একই পদ ধরে রাখতে উদ্যোগী হন। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ কেটি ওয়ালশকে উদ্ধৃত করে বইতে বলা হয়েছে, তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় ট্রাম্পের কাছে নিজেদের উপস্থাপন করেন। স্টিভ ব্যানন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উৎসাহ দেন এবং বিভিন্ন লক্ষ্যের কথা বলেন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার পল রায়ানের ঘনিষ্ঠ প্রিবাস সরকারের বিশেষ কাজের বিষয়ে ট্রাম্পকে সহযোগিতা করেন। আর কুশনার যিনি ধনীদের মধ্যে সমন্বয় করেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন মধ্যরাতে। অভিবাসন নিয়ে আদেশ জারি ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার দুর্দশার মধ্যেই তিনজনের দ্বন্দ্ব সবার সামনে আসে। বইতে বলা হয়েছে, এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ হচ্ছে একটি যৌক্তিক সাংগঠনিক কাঠামো বা চেইন অব কমান্ডের অনুপস্থিতি। এই তিনজনের দ্বন্দ্বের মাঝে পড়েন ওয়ালশ। তাকে কেউ কাজের নির্দেশনা দিলে অন্যরা তা বাতিল করতে বলেন। কেউ কিছু বললে কুশনার প্রথমে একমত হন, পরে সেটা অন্তর্ঘাতমূলক হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করেন। তিনি বলেন, ব্যাননের ভাবনা কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশ জারির মাধ্যমে নতুন প্রশাসনকে এগিয়ে নেওয়া। প্রিবাস এই ধারণার বিরোধী। তিনি রিপাবলিকান এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করতে চান। আর এর বিরোধী কুশনার সিইওদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করে তাদের মতে চলতে চান।

অথচ হোয়াইট হাউসে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানতেন না কুশনার। গত মার্চের শুরুর দিকে কেটি ওয়ালশ কুশনারকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অগ্রাধিকার দিতে চান এমন তিনটি বিষয়ের তালিকা দিন। কিন্তু এর কোনো জবাবই কুশনার দিতে পারেননি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরে আলোচনা হওয়া উচিত।

তিনজনই প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করা এবং অন্যদের খাটো করার পৃথক ম্যাকানিজম গড়ে তুলেছিলেন। তিনজনের কাজের ধরন ট্রাম্প পছন্দ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যা চান সব এদের মধ্যেই আছে। কিন্তু তিনি একটি বিষয় বুঝতে পারেন না যে, তিনি একসঙ্গে সব কিছু পাবেন না।

বইতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প যখন রাতে তার বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করতেন তখন তার কর্মকর্তাদের নানা ত্রুটি ও দুর্বলতার কথা বলতেন। যেগুলো ধীরে ধীরে গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে। তিনি বলতেন, ব্যানন অবিশ্বাসী, প্রিবাস দুর্বল আর কুশনার চুষে খাচ্ছে। সিন স্পাইসার একটা নির্বোধ, কনওয়ে ছিঁচকাঁদুনে আর ইভানকার ওয়াশিংটনে আসাই উচিত হয়নি। ট্রাম্পের আলাপের কারণেই হোয়াইট হাউসের ভেতরের খবর মুক্তভাবে প্রকাশ হতে থাকে।

আস্থার দেউলিয়াত্বে মার্কিন নেতৃত্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের ওপর বিশ্ববাসীর আস্থা ও বিশ্বাস দিনকে দিন কমছে। আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কারণে সে আস্থা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এক সময়ে নানা কারণে সমালোচিত চীনও এখন আস্থার জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড অ্যাপ্রোভাল রেটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন চীনের চেয়ে চার পয়েন্ট নিচে। তবে রেটিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে জার্মানি। নতুন এক জরিপের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে এই খবর।

নতুন এই জরিপটি চালানো হয় ১৩৪টি দেশের মানুষের মধ্যে। তাদের অভিমতের ভিত্তিতে পাওয়া জরিপে দেখানো হয়, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা (অ্যাপ্রোভাল রেটিং) ছিল ৪৮ শতাংশ।

জরিপে আরো বলা হয়, প্রথম বছরটি ক্ষমতায় থাকার পর ট্রাম্পের প্রতি মানুষের আস্থা যেখানটায় এসে নেমেছে, আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেলায় এমনটি কখনো ঘটেনি। নেতৃত্বের প্রতি আস্থার এই দ্রুত পতনের জন্য দায়ী করা হয়েছে ট্রাম্পকেই। তার পররাষ্ট্রনীতির নানারকম দোদুল্যমানতা, হঠকারী সিদ্ধান্ত, আগ্রাসী ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি, অন্যসব দেশের প্রতি ভুল মনোভাব এবং সর্বোপরি তার অস্থির ব্যক্তিস্বভাবÑসব কিছু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্ববাসীকে ক্রমশ বিরূপ করে তুলছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একক কর্তৃত্ব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে কোণঠাসা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বইতে বলা হয়েছে, সকল প্রশাসনে অন্তত ক্লিনটন ও আল-গোরের পর থেকে ভাইস প্রেসিডেন্টদের এক ধরনের স্বাধীন ক্ষমতা ছিল। অথচ ট্রাম্পের প্রশাসনে পেন্স যেন কেউই নয়, এক গুরুত্বহীন চরিত্র। ট্রাম্পের মেয়ে ও জামাইয়ের কাছে পেন্স খুবই হাস্যরসের পাত্র।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist