কূটনৈতিক প্রতিবেদক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮

চুক্তি চূড়ান্ত : দুই বছরে ফেরত যাবে রোহিঙ্গারা

* ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ফরমের রূপও চূড়ান্ত করা হয়েছে * চুক্তিতে প্রত্যাবাসনের সংখ্যাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ আছে

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের মাঠপর্যায়ের একটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে গত সোমবার টানা ১৩ ঘণ্টা বৈঠক হয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালের বৈঠকে চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দুই বছরের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে বলে চুক্তিতে দুপক্ষই সম্মত হয়েছে। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে দুদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে চুক্তিটি চূড়ান্ত রূপ পায়। এতে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ে তার দেশের নেতৃত্ব দেন।

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ফরমের রূপও চূড়ান্ত করা হয়েছে। চুক্তিতে প্রত্যাবাসনের সংখ্যাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ আছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ভূমিকার বিষয়টি এখানে যুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যাবাসনের পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকার বিষয় নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। দুই পক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে ঠিকঠাকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন দুই বছরের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যবর্তী বিভিন্ন সময়ে এ প্রক্রিয়ার অগ্রগতির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। প্রত্যাবাসন যাতে দ্রুত শেষ করা যায়, সে জন্য দুদেশের সীমান্তের জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গাদের দিয়ে কাজ শুরু করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার করে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। আর মিয়ানমারের প্রস্তাব ছিল সপ্তাহের পাঁচ দিন এক হাজার ৫০০ করে রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া। এর ফলে দুটি প্রস্তাবের মধ্যবর্তী প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ করে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো হতে পারে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে হামলা শুরুর পর ইতিহাসের ভয়াবহতম এ জাতিগত নিধন শুরু করলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় দেওয়া হলেও শুরু থেকেই বাংলাদেশের দাবি ছিল, নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে হবে মিয়ানমারের নাগরিকদের। কিন্তু সেই দাবির প্রতি কোনোভাবেই সম্মান দেখাচ্ছিল না দেশটি। পরে নানা কূটনৈতিক চাপের পর গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে দুই দেশের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে সমঝোতা সই হয়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। সমঝোতা অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যে শুরু করার কথা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পরে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, শুধু তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে। এ প্রত্যাবাসন হবে ধাপে ধাপে। এরপর ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে গঠন করা হয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। এর ধারাবাহিকতায় উভয় দেশের পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি চূড়ান্ত করল। সভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা যুক্ত ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist