মহসীন শেখ, কক্সবাজার
ব্যক্তিস্বার্থে দুই কোটি টাকায় সরকারি রাস্তা!
এক ব্যক্তির স্বার্থে প্রায় দুই কোটি টাকার একটি রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জুমখোলায় বর্তমানে রাস্তাটি নির্মাণের কাজ চলছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিতর্কিত অধ্যাপক শফিউল্লাহর বাগানে যেতে পাহাড় কেটে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে অধ্যাপক শফিউল্লাহ এই অভিযোগ নাকচ করেছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার ইটের (সলিং) রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু প্রকল্পটি জনস্বার্থবিরোধী বলে অভিযোগ উঠেছে। চলমান উন্নয়ন কাজটির আশপাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি এবং পাহাড়ি কিংবা বাঙালি কারোই গ্রাম নেই। তাহলে কার স্বার্থে ও কার উন্নয়নে সরকারি অর্থে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছেÑতা সচেতন মহলের প্রশ্ন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বহুল বিতর্কিত অধ্যাপক শফিউল্লাহর বনায়ন ও ফলদ বাগান রয়েছে ওই এলাকায়। বান্দরবানের পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লার ঘনিষ্ঠজন এবং ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ার সুবাদে প্রভাবশালী শফিউল্লাহর বাগানে যাওয়ার জন্যই সরকারি অর্থায়নে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মজার বিষয় হচ্ছে, উন্নয়ন কাজটির ঠিকাদারও শফিউল্লাহ। গোপন টেন্ডারে পাওয়া উন্নয়ন কাজটি মং বাহাইন আকাশের লাইসেন্সে বাস্তবায়ন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল্লাহ নিজেই। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ব্যবসায়িক পার্টনার সুমন দাশ এবং একসময়ের শিবির নেতা আমিরুল ইসলাম।
নির্মাণকাজে জড়িত এক শ্রমিক বলেন, রাস্তার নির্মাণকাজের ঠিকাদার শফিউল্লাহ। তার অধীনে ফুটে ছয় টাকা দামে রাস্তায় ইট বিছানো এবং বালু দেওয়ার কাজটি করছি।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি বিজয় মারমাসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, নির্মাণাধীন সড়কের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি এবং গ্রাম নেই। তাই বলতে পারি জনস্বার্থে রাস্তাটি করা হচ্ছে না। শুনেছি শফিউল্লাহর বাগান রয়েছে জুমখোলার শেষ প্রান্তে।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহান মারমা জানান, জুমখোলায় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারি টাকার অপচয়। কার স্বার্থে এবং কিসের ভিত্তিতে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে জানি না। আমার কোনো পরামর্শও নেওয়া হয়নি সড়কটি নির্মাণের ব্যাপারে। যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল্লাহ বলেন, ‘জুমখোলায় আমার কোনো জায়গা নেই। রাস্তা নির্মাণের ঠিকাদারও আমি নই। সামনে নির্বাচন আসছে তাই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
এ ব্যাপারে পার্বত্য জেলা পরিষদ বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান জানান, সোনাইছড়ির জুমখোলায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। তবে প্রকল্পটি কী কারণে গ্রহণ করা হয়েছে তা বিস্তারিত তিনি জানেন না বলে জানান।
"