নিজস্ব প্রতিবেদক
সরবরাহের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সবজির পেঁয়াজেও আসেনি স্বস্তি
শাক-সবজির এখন ভরা মৌসুম। দেশের আনাচেকানাচে সবজি উৎপাদনও বেড়েছে। একইসঙ্গে রাজধানীর বাজারে সরবরাহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তারপরও দাম কমছেই না, বরং উল্টো বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েক দফা দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে যে শিম প্রতিকেজি ৫০ টাকা বিক্রি করেছে, সেই শিম এখন ৮০ টাকা। এছাড়া ফুলকপি, লাউ, টমেটো, গাজরসহ বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা। অন্যান্য বছর এ সময়ে বাজারে নতুন পেঁয়াজের আধিপত্য লক্ষ করা গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। বাজারে স্বল্প পরিমাণে নতুন পেঁয়াজ উঠলেও বাজারকে প্রভাবিত করতে পারছে না। ফলে ক্রেতাদের অস্বস্তিও কাটছে না।
সবজি ব্যবসায়ীরা শাক-সবজির দাম বাড়ার পেছনে শীতের প্রকোপে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়াকে কারণ হিসেবে দেখালেও ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। মহাখালী কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা রসুলবাগের বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, মহল্লার দোকানের তুলনায় এখানে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা কম পাওয়া যায়। আজ (গতকাল) দেখছি সব ধরনের সবজির দামই বাড়তি। গত সপ্তাহে মহল্লায় যে দাম ছিল, তা বাজারে এসে মহল্লার চেয়ে বেশি দাম দেখতে পাচ্ছি।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় বেশিরভাগ সবজির দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে যে ফুলকপি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল গতকাল সেটি বিক্রি হয় ৩৫-৪০ টাকায়। ৩০ টাকার করলা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। ২০-২৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়া বাঁধাকপির দাম বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। ৪০ টাকা দামের শিম হয়েছে ৬০ টাকা। আর বিচিসহ শিমের দাম বেড়ে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে শালগম, মুলা, টমেটো, বেগুনও। ২০ টাকা কেজি দরের শালগমের দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। বেগুনের দাম এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা কেজি। মুলার দাম ১৫ টাকা কেজি থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটো এখন ৬০-৮০ টাকা। লাউয়ের দামও বেশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউর দাম এখন ৬০-৭০ টাকা। আগের সপ্তাহে নতুন আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গতকাল ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ৩০ টাকার শসা-খিরাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়।
ভরা শীতেও সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মহাখালী কাঁচাবাজারের আরেক বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, শীত বেড়ে যাওয়াই সবজির দাম বাড়তির কারণ। তার মতে, শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুয়াশাও বাড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে গ্রামাঞ্চল থেকে সবজিবাহী গাড়ি ঢাকায় আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন আর গ্রামেও কম দামে সবজি পাওয়া যায় না। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়তি। সার, বীজ, শ্রমিক, লাঙ্গল সব কিছুরই বাড়তি দাম। বিশেষ করে চালের দাম বাড়তি থাকায় কৃষক চাইলেও কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন কালাম।
এদিকে পৌষ মাসে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমেও অন্য বছরের তুলনায় দাম আকাশছোঁয়া। দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে গতকালও ৮৫-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে। দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দর ৬০-৬৫ টাকা আর আমদানি করা ভারতীয় লাল পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। মূলত দেশে তিন দফা বন্যা ও পেঁয়াজ আমদানির প্রধান বাজার ভারতে বন্যায় পেঁয়াজের চাষ ব্যাহত হওয়ায় আশ্বিন মাসের শেষের দিকে দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। এরপর দফায় দফায় বেড়ে দেশি পেঁয়াজের দাম পৌঁছে যায় কেজিপ্রতি ১৫০-১৬০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয় অগ্রহায়ণ থেকে মাঝ পৌষ পর্যন্ত।
"