প্রিন্স রাসেল
দাপুটে জয়ে শুরু বাংলাদেশের
নিষ্প্রাণ গ্যালারি নিরুত্তাপ লড়াই
পরিচিত দর্শকদের সামনে প্রায় দেড় বছরের ব্যবধানে ৫০ ওভারের প্রথম ম্যাচ। তবু ভক্তকুলের রোমাঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকল না ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর লড়াইটা। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের মতো দল বলেই কি না মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও পড়ল প্রভাবটা। শততম ওয়ানডে ম্যাচের মঞ্চায়ন করা টাইগারদের দুর্গ দেখল না প্রত্যাশিত দর্শক। নিষ্প্রাণ গ্যালারির মতো কাল ম্যাচটাও শেষ হলো নিরুত্তাপভাবে। যেখানে জিম্বাবুয়েকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ১৭০ রান তাড়া করতে নেমে টাইগাররা জিতল ১২৯ বল ও ৮ উইকেট অক্ষত রেখেই। সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল কতটা দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে, সেটা পরিষ্কার করে দিচ্ছে ম্যাচের ফলটাই।
অবশ্য দর্শক খরার কারণ শুধু যে অনুমিত ফল তা হয়তো নয়। হাড় কাঁপানো শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের ওপর দায়টা চাপানো যেতে পারে। না হলে ঘরের মাঠে এত দিন পর ওয়ানডে খেলতে নামা মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা কেন দেখবেন গ্যালারির ভাটির টান? শেরেবাংলার আসনগুলোর চেহারা যতই বিবর্ণ হোক না পরিচিত মঞ্চে টাইগাররা করেছে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্সটাই। ফলাফল আট বছরের মধ্যে টানা ১২ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারাল বাংলাদেশ। এর মধ্যে মিরপুরেরই অষ্টম।
একপেশে এই জয়ের নায়ক দুই বন্ধু সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। প্রথমজন সফরকারীদের টপ-অর্ডারে ধস নামাতে রেখেছেন কার্যকর ভূমিকা। গ্রায়েম ক্রেমারদের স্বল্প রানে বেঁধে রাখতে সামনে থেকে নেতৃত্বটা দিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতেও ছড়িয়েছেন আলো। পরেরজন ১৭১ রানের লক্ষ্যমাত্রাকে রূপ দিয়েছেন মামুলি কোনো গন্তব্যে। তবু একটা আক্ষেপ জমা হয়েছে তামিমের মনের কোণে। ১৬ রানের জন্য যে সেঞ্চুরিবঞ্চিত হলেন দেশসেরা ওপেনার!
আসলে তামিমের শতক হাঁকানোর জন্য জিম্বাবুয়ের রানটা পর্যাপ্ত ছিল না। অজেয় থেকেই মিরপুরের ২২ গজ ছাড়তে হলো তাকে। ৯৩ বলে ৮৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলার পথে তামিম সঙ্গ পেয়েছেন তিনজনেরÑএনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৪ মাস তামিমের তার সঙ্গে ব্যাট করতে এসে হতাশ করেছেন এনামুল। ফেরার ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা করেও অল্পতে থেমে গেছে ডান-হাতি ওপেনারের ঝড়। ১৪ বলে চারটি বাউন্ডারিতে ১৯ রানে সিকান্দার রাজার শিকার হয়ে এনামুল ফিরে গেছেন সাজঘরে। ক্রেইগ আরভিন তাকে তালুবন্দি করেন।
দলীয় ৩০ রানে দুই ওপেনার বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বাংলাদেশ এগিয়েছে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে। তামিম-সাকিব ৭৮ রানের জুটিটা প্রত্যাশিত জয়ের পথটা করে দিয়েছে মসৃণ। ৪৬ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন টাইগারদের ক্ষুদ্র ও দীর্ঘ ফরম্যাটের অধিনায়ক। পাঁচটি চার হাঁকানো সাকিবের ঘাতকও সিকান্দার রাজা। দুই সতীর্থের প্রস্থান দেখা তামিম ইনিংস লম্বা করেছেন বদলে যাওয়া স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে। ১৪ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিক শুধু তামিমকে ব্যাটিং ছন্দের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন, সেরেছেন জয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
তিন বছর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই মিরপুরেই ৭৩ রানে আউট হয়েছিলেন তামিম। সেঞ্চুরি না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাসটা কালও ছাড়তে হলো বাঁহাতি ড্যাশিং ওপেনারকে। আটটি চার ও একটি ছক্কা মারা তামিম তবু খুশি দলের দারুণ জয়ে অবদান রাখতে পেরে। বাংলাদেশের জয় দিয়ে নতুন বছর শুরু করতে পারার জন্য কৃতিত্বটা বেশি সাকিবের। তবে পিঠ চাপড়ে দিতে হবে পুরো দলটাকে। বোলিং, ফিল্ডিং এবং ব্যাটিংয়ে নিখুঁত পারফর্ম করার সম্ভাব্য সেরা ফলটাই পেয়েছে টাইগাররা।
‘মর্নিং শোজ দ্য ডে।’ ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে প্রবাদটা সার্থকতার প্রমাণ দিল আরো একবার। জিম্বাবুয়ে ইনিংসের প্রথম তিন বলেই সাকিবের জোড়া আঘাত। ৪৬তম ওভারে এসে সফরকারী অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমারকে পরিণত করেছেন নিজের তৃতীয় শিকারে। কিন্তু জিম্বাবুয়ের সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে ইনিংস শুরুর ওভারেই। ২ রানে ২ উইকেট হারানো অতিথিদের পতন হওয়া তৃতীয় উইকেটের মালিক মাশরাফি বিন মর্তুজা। উইকেট শিকারে তাদের সঙ্গে যোগ দেন মুস্তাফিজুর রহমান।
টাইগার বোলিং তোপে ৮১ রানেই পাঁচ উইকেট শেষ জিম্বাবুয়ের। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সিকান্দার রাজা ও পিটার মুর সফরকারীদের ইনিংস মেরামত করে দিয়ে যান। এ দুজনকে সাজঘরে পাঠিয়ে রুবেল হোসেন স্পর্শ করেছেন ওয়ানডেতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক। ৩৯ রানের মধ্যে শেষ পাঁচ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডারে ধস নামাতে নেতৃত্বটা দিলেন রুবেল।
বল হাতে পারফর্ম করা সিকান্দার ব্যাট হাতেও ছিলেন দলের ত্রাতা। ৯৯ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৫২ রান করেছেন এই অলরাউন্ডার। ইনিংসে দুটি করে চার-ছক্কা দেখিয়েছে তার ব্যাট। রান-আউট দুর্ভাগ্য বরণ না করলে হয়তো জিম্বাবুয়ের সংগ্রহটাকে আরো এগিয়ে নিতে পারতেন তিনি। ২২ গজে তার সঙ্গী মুর করেছেন ৩৩ রান। জাতীয় দলে ফেরার ম্যাচে ব্রেন্ডন টেলর ২৪ রানে আউট হয়েছেন। কিন্তু এই তারকার প্রত্যাবর্তনটা সুখের কোনো বার্তা দিতে পারল না জিম্বাবুয়ের জন্য।
"