বদরুল আলম মজুমদার ও নাঈমুল হাসান, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ১২ জানুয়ারি, ২০১৮

বিশ্ব ইজতেমা আজ শুরু, যোগ দিচ্ছেন না সাদ

মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলিগ জামাতের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ শুরু হচ্ছে। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাওয়া এ সম্মিলনে যোগ দিচ্ছেন না ভারতের তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভী। তিনি সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন এবং এ সময়ে কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুটি পক্ষের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান এসব কথা মন্ত্রী। এদিকে মাওলানা সাদের পরিবর্তে কে এবার মোনাজাত পরিচালনা করবেনÑসাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা তাবলিগ জামাতের মুরব্বিরাই ঠিক করবেন।

অন্যদিকে বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সেবায় পাঁচটি কন্ট্রোল রুম নির্মাণ করেছে (সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি)। ইজতেমার ১৭টি প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে ১৩টি তোরণ। ইজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করার লক্ষ্যে র‌্যাবের জন্য নয়টি ও পুলিশের জন্য ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা যথাসময়ে হবে। শান্তিপূর্ণ হবে। যাদের নিয়ে বিতর্ক ছিল তাদের নিয়ে একটা সমঝোতা হয়েছে। মাওলানা সাদ সুবিধামতো সময় বাংলাদেশ থেকে চলে যাবেন। তিনি ইজতেমায় অংশ নেবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কাকরাইলে থাকবেন।

গত বুধবার মাওলানা সাদের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া ঠেকাতে বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করেন তাবলিগ জামাতের একটি অংশ। গতকালও মাওলানা সাদকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের দিল্লিতে ফেরত পাঠানোরও দাবি তোলা হয়। নইলে পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

আগামী ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হবে। চার দিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের ইজতেমা ঘিরে আট স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত ইজতেমা হয়ে এলেও মুসল্লিদের চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ও পরে ২০১৬ সাল থেকে চার পর্বে ইজতেমা আয়োজন করা হচ্ছে। গত দুই বছর থেকে দেশের ৬৪ জেলাকে দুই ভাগে ভাগ করে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। সেই নিয়মে এবারও ৩২টি জেলার মুসল্লিরা প্রথম (১৬ জেলা) ও দ্বিতীয় পর্বের (১৬ জেলা) ইজতেমায় যোগ দিচ্ছেন। গত বছর যে ৩২ জেলার মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ নিয়েছিলেন, তারা এবার আসছেন না। তবে জেলাভিত্তিক ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন তারা। আগামী বছর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হবেন ওই ৩২ জেলার মুসল্লিরা। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের জন্য স্থান (খিত্তা) নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রথম পর্বে ২৭টি খিত্তা এবং দ্বিতীয় পর্বে ২৯টি খিত্তা স্থাপন করা হবে। প্রথম পর্বে দেশের ১৬টি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেবেন।

তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকেই ইজতেমা ময়দানে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান, ইবাদত-বন্দেগির নিয়মকানুন ও করণীয় নিয়ে বয়ান শুরু হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত ইজতেমায় ইমান, আমল ও আখলাকসহ তাবলিগের ছয় উসুল বা মূলনীতির ওপর বয়ান করবেন শীর্ষ মুরব্বিরা।

ইতোপূর্বেই ইজতেমাস্থলের রাস্তাঘাট, অসমতল ভূমি সমতলকরণ, আট হাজার পাকা পায়খানা, পাকা গোসলখানা, অজুখানা, বিদেশি মুসল্লিদের জন্য পয়ঃপ্রণালি, রান্নাবান্না, থাকার জন্য স্থায়ী পাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ, ইজতেমা সড়ক নির্মাণ, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সেবায় পাঁচটি কন্ট্রোল রুম ছাড়াও আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যের ৪৫টি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২৫ জন স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ইজতেমা ময়দানে দায়িত্ব পালন করবেন। ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের সেবায় নিয়জিত থাকবে। ১৩টি উৎপাদক নলকূপ দ্বারা ১৩ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ঘণ্টায় তিন কোটি ৫৫ লাখ গ্যালন সুপেয়পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।

দুই পর্বে খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান : এ বছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসব খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলোÑঢাকা খিত্তা নং-১-৮; ১৬, ১৮, ২০ ও ২১; পঞ্চগড় খিত্তা নং-৯; নীলফামারী খিত্তা নং-১০; শেরপুর খিত্তা নং-১১; নারায়ণগঞ্জ খিত্তা নং-১২ ও ১৯; গাইবান্দা খিত্তা নং-১৩; নাটোর খিত্তা নং-১৪; মাদারীপুর খিত্তা নং-১৫; নড়াইল খিত্তা নং-১৭; লক্ষ্মীপুর খিত্তা নং-২২ ও ২৩; ঝালকাঠি খিত্তা নং-২৪; ভোলা খিত্তা নং-২৫ ও ২৬; মাগুরা খিত্তা নং-২৭ ও পটুয়াখালীর মুসল্লিরা ২৮নং খিত্তায় অবস্থান করে তাদের ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন এবং দ্বিতীয় পর্বে ঢাকা জেলাÑখিত্তা নং-১-১০; ১৮ ও ১৯; জামালপুর খিত্তা নং-১১ ও ১২; ফরিদপুর খিত্তা নং-১৩; ফরিদপুর খিত্তা নং-১৪; ঝিনাইদহ খিত্তা নং-১৫; ফেনী খিত্তা নং-১৬; সুনামগঞ্জ খিত্তা নং-১৭; চুয়াডাঙ্গা খিত্তা নং-২০; কুমিল্লা খিত্তা নং-২১ ও ২২; রাজশাহী খিত্তা নং-২৩ ও ২৪; খুলনা খিত্তা নং-২৫ ও ২৭; ঠাকুরগাঁও খিত্তা নং-২৬ ও পিরোজপুর খিত্তা নং-২৮ অংশ নেবেন।

নিরাপত্তা : গতকাল থেকে ইজতেমার চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এবারও বিশ্ব ইজতেমার চারপাশ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব-পুলিশসহ এবার বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে ১২ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করবেন। থাকবে আট স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইজতেমা মাঠের ভেতরে সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে। গাজীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইজতেমার প্রথম পর্বে ইজতেমা ও আশাপাশের এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছয় হাজার পুলিশ সদস্য এবং দ্বিতীয় পর্বেও ছয় হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। গতকাল দুপুরে ইজতেমাস্থলের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশের এক ব্রিফিংয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এ কথা জানান। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত র‌্যাব। ইজতেমা ময়দানে সার্বক্ষণিক ২৫০ র‌্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। দুই পর্বের ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে র‌্যাব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের রিজার্ভ জনবল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist