বদরুল আলম মজুমদার

  ১০ জানুয়ারি, ২০১৮

বিএনপির ভরসা তাবিথেই!

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে আগের বারের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর এবারও ভরসা রাখতে চাইছে বিএনপি। দলটিতে মেয়র প্র্রার্থীর আলোচনায় বেশ কয়জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত বোরবার রাতে জোটের বৈঠকেও ২০ দলের পক্ষ থেকে একক প্রার্থিতা দেওয়ার বিষয়ে সিন্ধান্ত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জামায়াত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। এদিকে, গতকাল তফসিল ঘোষণার পর তাবিথ আউয়ালের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। আর আগামী শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর জোটের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাবেক কমিশনার আবদুল মজিদের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আওয়ামী লীগের পক্ষের প্রার্থীরা বেশ কয়েক দিন থেকে নির্বাচনের প্রচারে থাকলেও তাবিথ বা বিএনপির কাউকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। তবে, গত তিন-চার দিন থেকে বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ নগরীতে পোস্টার টানিয়ে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। গত প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে লন্ডনে থাকায় তাবিথ আউয়ালের পদচারণা তেমনটা চোখে না পড়লেও তার বাবা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু তাবিথের পক্ষে গণমাধ্যমে বেশ সরব ছিলেন। সম্প্রতি দেশে এসেই তাবিথ দেখা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তারপর থেকেই মূলত নির্বাচনী গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শুরু করেন তিনি।

সূত্র জানায়, তাবিথের পক্ষে চেয়ারপারসন আগেই মনস্থির ছিলেন। তাই বিএনপিতে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। এদিকে, চেয়ারপারসন তাবিথের নির্বাচনের প্রধান এজেন্টও ঠিক করে রেখেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। চেয়ারপারসনের ইচ্ছা অনুযায়ী, নোয়াখালীর ইজম থাকায় বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদকে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ঘোষণা প্রায় নিশ্চিত। তবে, আরো বেশ কয়েকজন নেতাও প্রধান এজেন্ট হতে দেন দরবার করছেন বিএনপিতে।

সম্প্রতি পানামা পেপারসে তাবিথসহ মিন্টু পরিবারের নাম গণমাধ্যমে আসার পর থেকেই এই পরিবারের বিরুদ্ধে কথা উঠতে থাকে। অনেকেই বলেন, বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠায় এমন প্রার্থী নিয়ে বিএনপিকে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। তখনই উত্তরের মেয়র পদে আলোচনায় আসে বেশ কয়েকজনের নাম। ঢাকা উত্তর এলাকায় কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ভোটারাধিক্য থাকায় আলোচনায় বরাবরই ছিলেন সেই অঞ্চলের নেতারা। এদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ও চেয়াপারসনের উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলুর নাম অন্যতম। কিন্তু তাবিথের বিষয়টি শুরু থেকেই চেয়ারপারসনের সুনজরে থাকায় অন্যরা তেমনটা অগ্রসর হননি।

তাবিথের প্রার্থিতা নিয়ে গণমাধ্যমে সরাসরি কথা বলেন বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুও। তিনি বলেছেন, উত্তর সিটিতে বিএনপির প্রার্থী বদলের কারণ দেখি না। গত নির্বাচন তাবিথ বর্জন করেনি। নির্বাচন বর্জন করেছে দল। তাই দলের পক্ষে প্রার্থী পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেনি। দল প্রার্থী পরিবর্তন করলে, একটা প্রেক্ষিত লাগে। সেই প্রেক্ষিতগুলো এখনো অনুপস্থিত বলেই আমার ধারণা, তাবিথ আউয়ালই আবার বিএনপির প্রার্থী হবেন।

গতকাল প্রতিদিনের সংবাদকেও তিনি আগের কথাই বলেন। বলেন, এত তাড়া কেন। শনিবারই প্রার্থী ঘোষণা করবে বিএনপি। আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। সব ঠিক থাকলে তাবিথই আমাদের প্রার্থী।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত সরকার ডিএনসিসি নির্বাচন করতে আন্তরিক কি না সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারি দল আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি যেমনই হোক, ডিএনসিসি উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি দুটোই রাখছে বিএনপি।

এক প্রশ্নের জবাবে মহাসিচব বলেন, গত সোমবার রাতে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব বিএনপি চেয়ারপাররসন খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যাকে মনোনয়ন দিবেন, জোট তাকেই সমর্থন দেবে। এরই অংশ হিসেবে শরিক জামায়াত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি ঢাকা উত্তরের আমির ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত। নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াত হঠাৎ করেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করায় জোটের অন্য শরিকরাও দ্বিধায় পড়ে যান। জোটের বৈঠকে এ নিয়ে অন্য দলের নেতারা জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নেতাদের এমন প্রশ্নের জবাবে বৈঠকে উপস্থিত থাকা জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে তফসিল ঘোষণার আগে অনেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। আমরাও করেছি। তবে জোটগতভাবে নির্বাচন করলে আমরা আমাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করব। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে হালিম আরো বলেন, ম্যাডাম আমাদের দলের শীর্ষ নেতারা কারাগারে আছেন। আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগও হয় না। আমরা জোটের সঙ্গেই আছি। আপনি যে সিদ্ধান্ত নেন সেটাই মেনে নেব।

ডিএনসিসি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চান কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলে, আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছি। ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য করতে হলে সেনা নিয়োগের বিকল্প নেই। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাধ্যমে বুঝতে পারব, জাতীয় নির্বাচনে ইসির ভূমিকা কি হবে। আমরা আশা করছি, ইসি ডিএনসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু করার চেষ্টা করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist