প্রতীক ইজাজ

  ১০ জানুয়ারি, ২০১৮

ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

শুরু হলো ক্ষণ গণনা

এখনো মাঠে আতিকুল

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং উত্তর-দক্ষিণে নতুন যুক্ত হওয়া

৩৬ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভোট। ফলে আজ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো নির্বাচনীযজ্ঞ। দলীয় প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামবে রাজনৈতিক দলগুলো। থাকবে স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনী আমেজে সরগরম হয়ে উঠবে

নির্বাচনী এলাকা। রাজনীতিও ব্যস্ত হয়ে পড়বে এ নির্বাচন নিয়ে। ভোটাররা উৎসুক হয়ে থাকবে

শেষদিনের অপেক্ষায়, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে দল ও জোটের শরিকদের মধ্যে মনোমালিন্য দূর করতে সরাসরি দলের নেতৃত্বে নেই কিন্তু আদর্শে বিশ্বাসী এমন একজনকেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। তবে উত্তর ও দক্ষিণে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দলের বাইরে শরিক দলগুলো থেকেও প্রার্থী করা হতে পারে। যেহেতু কাউন্সিলররা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না, সেজন্য দল সরাসরি এসব প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রমতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দল। এই নির্বাচনের ফলাফল সামনে অনুষ্ঠেয় অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এমনকি এই নির্বাচনের পরিবেশের ওপর সরকারের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সদিচ্ছাও প্রকাশ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে সম্ভাব্য সব চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই নির্বাচনের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। এজন্য সবদিক বিবেচনায় নিয়েই প্রার্থী মনোনয়ন দেবে দল।

গতকাল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন ও উত্তর-দক্ষিণে যুক্ত হওয়া নতুন ৩৬ ওয়ার্র্ডে কাউন্সিল ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আগামী ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে জয় পেতে চায় আওয়ামী লীগ। যেহেতু প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে এবং সর্বশক্তি নিয়ে অংশ নেবে; সে কারণে এ নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। দল চাইছে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কাজে লাগাতে। সেজন্য মেয়র পদে প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে নিয়েছেন।

দলের নির্বাচন পরিচালনা সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্ভাব্য ১০ শীর্ষ প্রার্থীর নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নাম এসেছে। সরকার টানা দুই দফা ক্ষমতায়। প্রার্থী হওয়ার মতো দলেরই মধ্যেই অনেকে রয়েছেন। ফলে প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলকে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এই নির্বাচনের পরপরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুতরাং, প্রার্থিতা নিয়ে দল বা জোটের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য চায় না দল। এজন্য এমন প্রার্থী করা হবে যিনি দলের নেতৃত্বে নেই, কিন্তু দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী ও জনপ্রিয়।

কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী গতকাল তফসিল ঘোষণার পর দলের ভেতর ও বাইরে এ আলোচনা আরো জোরালো হয়েছে। সাধারণ ভোটাররাও তাকিয়ে রয়েছেন সে দিকে। আগে থেকেই নাম শোনা যাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে লবিং অব্যাহত রেখেছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা পর্যায়ে আলোচনা। তবে এখন পর্যন্ত আগে থেকেই মাঠে থাকা তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকেই দলের প্রার্থী হিসেবে ভাবা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে আলোচনার শুরুর পর থেকেই তিনি মাঠে রয়েছেন। দলের নীতি নির্ধারণী মহলের সবুজ-সংকেত পেয়ে তিনি ইতোমধ্যেই এক ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। উত্তরের দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করছেন। তার পক্ষে নগরজুড়ে প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।

সর্বশেষ গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আতিকুল ইসলামকে যে দলীয় প্রার্থী করা হচ্ছে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতাদের। বৈঠকে একজন নেতা ঢাকায় দলীয় প্রার্থী ঠিক করার বিষয়ে আলোচনা সামনে আনলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এ সময় বলেন, ‘আতিক তো কাজ করছেন’। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর নেতারাও নিশ্চিত হয়েছেন, আতিকই হচ্ছেন দলীয় প্রার্থী।

তবে আতিকুল ইসলামের বাইরেও বেশ কয়েক নেতা আলোচনায় রয়েছেন। এসব আগ্রহী প্রার্থীর অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। অনেকে উচ্চপর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিজিএমইএ এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ব্যবসায়ী আবদুস সালাম মুর্শেদী, বিসিএস ক্যাডারের সাবেক উপসচিব ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম, আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল, চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল আশেকী।

শেষ পর্যন্ত আতিকুল ইসলামই প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো জানিয়েছে। তাদের মতে, ঢাকা উত্তরের বেশ কিছু এলাকায় অপেক্ষাকৃত অভিজাত শ্রেণির মানুষের বসবাস। তাদের ভোট টানতে আতিকুল ইসলামের মতো নেতাকেই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। আতিকুল ইসলামের কোনো বদনাম নেই, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে। তার ভাই তাফাজ্জাল ইসলাম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আরেক ভাই মইনুল ইসলাম সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান ছিলেন।

এ ব্যাপারে আতিকুল ইসলাম বলেন, মেয়র পদে প্রার্থী হতে আমি প্রধানমন্ত্রী ও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি। গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছি। মাঠেও নেমেছি। তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আশা করছি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মনোনয়ন পেলে আমি জয়ী হব।

অবশ্য উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৬ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা নিয়ে সরগরম এখন আওয়ামী লীগ। দলীয় সমর্থন পেতে চলছে জোর লবিং। দলীয় অফিস এবং নেতাদের বাসায় বাসায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। তফসিল ঘোষণার পর এখন শুধু নির্বাচনী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায় তারা। দলীয় মেয়র এবং সমর্থনপ্রাপ্ত কাউন্সিলরদের নিয়ে মাঠে নামবেন দলের নেতাকর্মীরা। সে লক্ষ্যেই তারা প্রস্তুত হচ্ছেন। দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় এ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক দল হিসেবেই অংশ নেবে। তবে সঙ্গে থাকছে জোটের শরিকদের পূর্ণ সমর্থন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ নির্বাচন দলীয়ভাবে হবে। আওয়ামী লীগ একক দল হিসেবে অংশ নেবে। তবে কাউন্সিলরের ক্ষেত্রে শরিকদের কারো শক্ত প্রার্থী থাকলে সেটা বিবেচনা করা হতে পারে।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত। তবে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মনোনয়ন বোর্ডে আলোচনার পর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এখন দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক ডাকা হবে। এ বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।

দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে মাঠে থাকবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ- এমন তথ্য জানিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এখন সংগঠিত। নির্বাচনে যাকে প্রার্থী দেওয়া হবে তার পক্ষেই আমরা কাজ করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist