হাসান ইমন
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অমান্য
মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার এখনো সরেনি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন এবং দুই সিটির (উত্তর ও দক্ষিণ) নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের নির্বাচনী তফসিলকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটি এলাকার আগাম নির্বাচনী প্রচারসামগ্রী ৬ জানুয়ারির মধ্যে অপসারণের নির্দেশনা দিলেও কোনো প্রার্থী তা অপসারণ করেননি। বরং মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকা। বাড়ির সীমানা দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ফ্লাইওভারের খুঁটিসহ সব জায়গায় রয়েছে প্রার্থীদের অসংখ্য পোস্টার।
যদিও ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের পরে কোনো প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার কোথাও দেখা গেলে সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদ- অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ- অথবা উভয় দ- হতে পারে। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর (পোস্টার অপসারণে) এক চিঠিতে ঢাকা উত্তর সিটির পুরো এলাকায় ও দক্ষিণের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, বিলবোর্ড, তোরণ, দেওয়াল লিখনসহ সব প্রচারসামগ্রী ৬ জানুয়ারির মধ্যে সরাতে বলা হয়েছিল। বছরের শেষদিনে বিভাগীয় কমিশনারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়েছেন যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহম্মদ খান। চিঠিতে বলা হয়, তফসিল ঘোষণার আগেই উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পূর্ণ এলাকা এবং দক্ষিণের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের আগাম প্রচারসামগ্রী ৬ জানুয়ারি রাত ১২টার মধ্যে নিজ খরচে অপসারণ করতে হবে। তা না হলে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু কোনো প্রার্থীকে আগাম প্রচারসামগ্রী সরাতে দেখা যায়নি। গতকাল সোমবারও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার দেখা গেছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন এলাকা উত্তরা, কুড়িল বিশ্বরোড ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন এলাকা চেয়ে গেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার। এরমধ্যে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর, কারওয়ান বাজার এলাকা, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিজিএমইয়ের সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের পোস্টার দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আদম তমিজী হকের পোস্টারও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় দেখা গেছে। এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী শাকিল ওয়াহেদের পোস্টার চেয়ে তেজগাঁও এলাকা। সাতরাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন লিংক রোডের পাশে দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে তার পোস্টার। সম্ভব্য মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারও দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায়। এরমধ্যে ডিএনসিসি ৫১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খন্দকার শরিফুল ইসলাম ও আবুল হোসেন মেম্বারের পোস্টার। ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরপ্রত্যাশী করিম খান, দেলোয়ার হোসেন ও দিলবর হোসেন মাদবরের পোস্টার দেয়ালে সাটানো অবস্থায় দেখা গেছে।
ভোটের তফসিল ও আগাম প্রচারসামগ্রী সরানো বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি যার যার পোস্টার তারা নিজেরা অপসারণ করবে। যদি না হয় সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তাদের জনবল দিয়ে সরিয়ে ফেলবে। যেহেতু আমরা ৯ জানুয়ারি (আজ) তফসিল ঘোষণা করব। আর তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের বিষয় চলে আসে। তখন বিধিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। কেননা প্রতীক বরাদ্দের আগে কেউ নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবে না। এর আগে গত ৪ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন দুই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ভোটের তারিখও নির্ধারণ করেছে। ওইদিন কমিশন জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি মেয়রের শূন্য পদে নির্বাচন এবং উত্তর ও দক্ষিণের নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিল পদে ভোট হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি-আওয়ামী লীগ শিগগিরই তাদের প্রার্থী ঘোষণা দেবে। তবে দুই দল থেকেই বেশ কয়েকজন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা শুর” হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনিসুল হক চার লাখ ৬০ হাজার ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ৩০ নভেম্বর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়র আনিসুল হক মারা যান। এরপর ৪ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। আইন অনুযায়ী, শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে ওই পদে উপ-নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।
"