নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসিকের বাচ্চু ও ব্যবসায়ী সাইফুলকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগের মুখে থাকা বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল সোমবার দুপুরে বাচ্চু দুদক কার্যালয়ে এলে কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তাকে জিজ্ঞাবাদ করা শুরু হয় বলে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান। একইদিন এবি ব্যাংকের অর্থ বিদেশে পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন ব্যবসায়ী সাইফুল হক। এর আগে দুই দফা তলবে দুদক তার সাড়া না পেলেও গতকাল সকালে নিজেই সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে
হাজির হন তিনি। এদিকে, এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও ‘অসুস্থতার’ কারণ দেখিয়ে তিনি দুদকের কাছে এক মাস সময় চান। কিন্তু দুদক সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদকের তলবে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথমবার হাজির হন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চু। একদিন বিরতি দিয়ে ৬ ডিসেম্বর প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। আবদুল হাই বাচ্চুর সম্পদ নিয়েও অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। কমিশনের উপপরিচালক শামসুল আলম এর অনুসন্ধান করছেন।
২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে বাচ্চুকে নিয়োগ দেয় সরকার। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।
বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংটির ঋণ বিতরণে অনিয়মের ঘটনাগুলো ঘটে, পরে দুদক ৫৬টি মামলা করে। এর মধ্যে ১৫টি মামলার বিষয়ে আগের দুই দিন বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।
ব্যবসায়ী সাইফুল হককে কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সিঙ্গাপুর ও দুবাইভিত্তিক কোম্পানি পিনাকল গ্লোবাল ফান্ডের (পিজিএফ) সঙ্গে মিলে বিনিয়োগের নামে এবি ব্যাংকের ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে এই তদন্ত করছে দুদক। এবি ব্যাংকের গ্রাহক আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল হক ওই অর্থ পাচারে জড়িত ছিলেন বলে দুদক কর্মকর্তাদের সন্দেহ। সাইফুল হক স্কাই এভিয়েশন সার্ভিসেস লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানির পরিচালক। তার ওই কোম্পানি বাংলাদেশে ফ্লাই দুবাইয়ের এজেন্ট। এক সময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কাজ করা সাইফুলের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবি ব্যাংকে। তবে তিনি বিয়ে করেছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের দ্বিতীয় মেয়েকে। আর মোরশেদ খান ওই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান।
এর আগে শুল্কমুক্ত কোটায় সাইফুলের স্কাই এভিয়েশন সার্ভিসেস লিমিটেডের আনা চারটি বিলাসবহুল গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে জব্দ করেছিল। এবি ব্যাংকের অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, ছয় পরিচালক ও দুই সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। আর সাইফুল হককে হাজির হওয়ার জন্য গত বৃহস্পতি ও রোববার দুই দফা সময় দিলেও ওই দুই দিন তিনি যাননি।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এবি ব্যাংকের অর্থ পাচারের ওই ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে। সে সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এম ওয়াহিদুল হক। মো. ফজলুর রহমান ও শামীম আহমেদ চৌধুরী ছিলেন এমডির দায়িত্বে।
তাদের পাশাপাশি ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড ট্রেজারি শাখার প্রধান আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হেড অব করপোরেট মাহফুজ উল ইসলাম, হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, ওবিইউর কর্মকর্তা মো. আরিফ নেয়াজ, কোম্পানি সচিব মাহদেব সরকার সুমন ও প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা এম এন আজিমকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। আর এবি ব্যাংকের ছয় পরিচালক শিশির রঞ্জন বোস, মেজবাহুল হক, ফাহিমুল হক, সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন, রুনা জাকিয়া ও অধ্যাপক এম ইমতিয়াজ হোসাইনকে রোববার সকাল ৯টায় থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, এবি ব্যাংকের দুই কোটি ডলার ও পিনাকলের আট কোটি ডলার মিলিয়ে ১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করে তা দুবাইয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়েই এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে দুই কোটি ডলার পাঠিয়ে দেওয়া হয় আবুধাবির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। পরে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। আর কথিত ওই বিনিয়োগ এবং অর্থ আত্মসাতের পেছনে আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের সাইফুল এবং তার বন্ধু দুবাইয়ের নাগরিক খুররম আবদুল্লাহর ভূমিকা ছিল বলে দুদক কর্মকর্তাদের ধারণা।
"