প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
কনকনে ঠান্ডা থাকবে দুই দিন : আসছে আরো শৈত্যপ্রবাহ
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার অবধি শীতের তীব্রতা কমবে না। এ সময় রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলিসিয়াস নেমে যাবে। এ মাসেই তিনটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভবনা রয়েছে। জানুয়ারিতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি (৬ ডিগ্রি- ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস), একটি তীব্র (৪ ডিগ্রি-৬ ডিগ্রি সে.) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ, অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু (৮ ডিগ্রি ১০ ডিগ্রি সে.) বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
পৌষ শেষের দিকে, মাঘ আসতে আরো সপ্তাহ খানেক বাকি। রাজধানীসহ দেশব্যাপী জেঁকে বসেছে শীত। প্রতিদিন নামছে তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর শৈতপ্রবাহে অনুভূত হচ্ছে কনকনে ঠা-া। উত্তরে হুল ফোটানো ঠা-া বাতাসে কষ্টে রয়েছেন প্রান্তিক মানুষ। ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধসহ সকল বয়সের মানুষ। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে শীতজনিত রোগে মারা গেছে দেড় বছরের এক শিশু। অনেকে খড়-কাঠ জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন। নদী অববাহিকায় কুয়াশা পড়ছে বেশি। কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনগুলো দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। মানুষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া বেরুচ্ছেন না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ফলে অস্থায়ীভাবে আকাশ মেঘলা থাকছে। উঁকি দিতে পারছে না সূর্য। ঘন কুয়াশায় দৃশ্যমানতা নেমে এসেছে ৫০ মিটারে। বিমান, নৌ পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। শক্তিশালী ঝঞ্ঝার হাত ধরে এক দফা বৃষ্টি হয়ে গেলে কুয়াশা এত ঘন হতে পারত না।
শীতকালীন ‘লা নিনার’ কারণে এবার বাংলাদেশের কোথাও কোথাও কিছুদিন কিছুটা বেশি মাত্রায় ঠান্ডাও পড়তে পারে। এবারকার ঠান্ডাটা অন্যান্য বছরের চেয়ে একটু বেশি ব্যতিক্রম। আমাদের দেশে মূলত ডিসেম্বর থেকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু করে আবার কিছুদিন পর তা হ্রাস পেয়ে গেছে এমন উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু এবার পুরো ডিসেম্বরের মাসে ঠান্ডা ছিল খুবই সহনীয় মাত্রায়। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহী : রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার ভোর ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, রাজশাহীতে সপ্তাহ জুড়েই তাপমাত্রা কমছে।
উলিপুর (কুড়িগাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুরে কনকনে ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকায় গরম কাপড়ের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ব্র?হ্মপুত্র ও তিস্তা নদ-নদীর অববাহিকার মানুষ। এদিকে, উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা বোরো চাষাবাদের প্রস্ততি নিলেও কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় মাঠে যেতে পারছে না। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় এক হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছে কৃষকরা। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার রায় জানান, ঠান্ডার কারণে নিম্নাঞ্চলে বোরো চাষে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তাতে ফলনের কোনো সমস্যা হবে না।
পঞ্চগড় : দিনভর মেঘলা আকাশ, কুয়াশায় ঢাকা চারদিক, সূর্যের দেখা নেই। সেই সঙ্গে হিমালয় থেকে নেমে আসা উত্তরে বাতাসে কাহিল পঞ্চগড়ের মানুষ। গতকাল শনিবার তাপমাত্রা সামান্য বেশি হলেও ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে অনেক বেশি। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ২৮ হাজার কম্বল এসেছে। যা শীতার্ত লোকজনদের মধ্যে ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন শীতবস্ত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : টানা চার দিনের শৈত্যপ্রবাহে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ৩৫জন শিশু, ডায়রিয়ায় ২০জন, অন্যান্য রোগে ৪৩ জন ভর্তি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নদ-নদী বেষ্টিত এ জেলায় দরিদ্র মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছেন। রেহাই পাচ্ছে না গবাদি পশু। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের সুরবালা জানান, গত বন্যায় বাড়ির সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নাই।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৫৭ হাজার কম্বলের মধ্যে ৫০ হাজার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। শীত নিবারণে হতদরিদ্রদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গুরুদাসপুর : নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলাঞ্চলে ঠা-াও বেশি। কুয়াশা সারাদিনই দেখা যায়। শীতের কারণে কয়েকজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. রবিউল করিম শান্ত। শীতের পোশাকের দোকানে ভিড় বাড়ছে। লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
"