নিজস্ব প্রতিবেদক
জনশক্তি রফতানিতে রেকর্ড
২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ১০ লাখের বেশি শ্রমিক বৈধ পথে কাজ করতে গেছেন। এটা জনশক্তি রফতানিতে কোনো একটি বছরের সর্বোচ্চ। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি। আর কর্মীদের মধ্যে তিনটি দেশেই গেছে প্রায় সাড়ে আট লাখ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ আট হাজার ৫২৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এর আগে ২০০৮ সালে আট লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন কর্মী বিদেশ গিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর নয় বছরে প্রায় ৫২ লাখ কর্মীর বিদেশে চাকরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনশক্তির বাজার খোঁজার নির্দেশ দিয়েছে। আর এর সুফল মিলছে। আর জনশক্তি রফতানিতে সরকার যেমন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তেমনি দেশে শ্রমিকদের ভাষা থেকে শুরু করে নানা কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে দক্ষ করে তুলছে। অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে দক্ষ শ্রমিকের মজুরিও বেশি হয়।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ৭০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৪৮টি ট্রেডে দেশের তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম ই-মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
২০১৭ (জানুয়ারি-নভেম্বর) সালে বিএমইটির আওতায় পরিচালিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ও আইএমটিসমূহে দক্ষতা উন্নয়ন (ডিপ্লোমা-ইন-মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, এসএসসি ভোক, দুই বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট ইন মেরিন ট্রেড ও অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি কোর্স), হাউজকিপিং কোর্স ও প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ কোর্সে সর্বমোট সাত লাখ ৪২ হাজার ৫১৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের দুটো বাজার আগেও চালু ছিল। আমরা পুনরায় চালু করেছি এবং যোগাযোগ আগের চেয়ে বৃদ্ধি করেছি। যার ফলে, এই দুটো বাজারে আমাদের ব্যাপক সংখ্যক কর্মী গেছে। এর ফলে এই রেকর্ড হয়েছে।’
কোন দেশে কত লোক গেছে : মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, বিদায়ী বছর বাংলাদেশ থেকে যত মানুষের বিদেশে চাকরি হয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকই হয়েছে সৌদি আরবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দেশটিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ কর্মী গেছে। এর বাইরে মালয়েশিয়ায় এক লাখ, ওমানে প্রায় ৯০ হাজার এবং কাতারে গেছে ৮২ হাজার জন।
বিদায়ী বছর দেশের বাইরে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা এক লাখ ২২ হাজার। এদের মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন প্রায় ৮৩ হাজার, জর্ডানে প্রায় ২০ হাজার এবং ওমানে প্রায় নয় হাজার।
বিগত বছরে বিদেশে যত কর্মী গেছে তার মধ্যে জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় গেছে প্রায় এক লাখ। ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
জনশক্তি রফতানি বাড়াতে আরো যত উদ্যোগ : প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৭ সালের মার্চে আইএম জাপান এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন কর্মী পাঠাতে শুরু করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, জাপানের সঙ্গে সমঝোতা, মরিশাসের সঙ্গে কর্মী প্রেরণ-সংক্রান্ত চুক্তি এবং রাশিয়ার সঙ্গেও কর্মী প্রেরণ-সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এসব চুক্তি অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ এবং কর্মী পাঠানো শুরু হবে।
শ্রম কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৮টি দেশে ১৯টি নতুন শ্রম কল্যাণ উইং খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে ২০১৭ সালে লেবানন ও মরিশাস দুইটি দেশে শ্রম কল্যাণ উইং চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ২৭টি দেশের মিশনে ৩০টি শ্রমকল্যাণ উইং অভিবাসন সমর্থিত কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তাদের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ লক্ষ্যমাত্রা ১০.৭ এর আলোকে নিরাপদ, নিয়মিত ও দায়িত্বশীল অভিবাসন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে এ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সে লক্ষ্যে অভিবাসন ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে।
এ বছরই সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ ১৫টি দেশের অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি চলছে।
প্রবাসী আয় কত : জনশক্তি রফতানি বাড়ায় প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বাড়ছে। ২০০৯ থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী কর্মীরা বাংলাদেশে এক লাখ ১৮ হাজার ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১২ হাজার ৩৫৯ মিলিয়ন ডলার।
বছরের শুরু দিকে রেমিট্যান্স এর পরিমাণ কম থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে রেমিট্যান্স কমার কারণ খুঁজে বের করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি জেলায় জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস এবং বিদেশে শ্রমকল্যাণ উইং এর মাধ্যমে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের প্রচার চালানো হয়। ফলে এখন রেমিট্যান্স প্রেরণে গতি বেড়েছে।
"