reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ মে, ২০১৬

সাক্ষাৎকার

বিশ্বজুড়েই রয়েছে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিতর্ক : এম রিজওয়ান

উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাবিদরাও সকল শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন দাবি করছেন। কেননা বিশ্বের সাথে র‌্যাংকিং-এর প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। এসব বিষয়ে প্রতিদিনের সংবাদকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মুরাদ হুসাইন

দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। বাড়ছে না শিক্ষার মান। এটি নিয়ে স্বয়ং শিক্ষাবিদ ও গুণিজনদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় এ পরিস্থিতি আরো তীব্রতর। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে তারা পিছিয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেই সনদ মিলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ আর গবেষণার স্থান। সেখানে ভর্তি হলেই যদি সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, তাহলে উচ্চশিক্ষায় বড় ধস নামবে বলে আশঙ্কা করছেন দেশের শিক্ষাবিদরা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো যেখানে গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক উঠছে। এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান বলেন, উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কম-বেশি বিতর্ক আছে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। তবে উচ্চশিক্ষা যত বেশি গবেষণানির্ভর করা যাবে তত বেশি দেশ ও মেধার উন্নতি হবে বলে তিনি মনে করেন।

গুণগত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত না হওয়ার পেছনে প্রধান সমস্যা হিসেবে তিনি মনে করেন, বর্তমানে দেশে উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মানের নি¤œগতি। সেই সঙ্গে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব এবং অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার মান বজায় রাখার চাইতে বাণিজ্যকে বেশি প্রাধান্য দেয়। সময়োপযোগী ও মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে অর্থের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি এবং অন্যান্য ভৌত সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই এ বিষয়টির গুরুত্ব রয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।

হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া দেশের বেশিরভাগ সরকারি-বেসরকারি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গুণগত শিক্ষা দিতে পারছে না। বিশেষ করে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ হিসেবে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধিক নজরদারির প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন-২০১০ অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেই সবাই এর আওতায় আসবে বলে তিনি মনে করেন। রিজওয়ান খান জানান, সরকার ইতিমধ্যেই উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসবের পাশাপাশি শিক্ষকদের উচ্চতর শিক্ষা, ট্রেনিংয়ের সুবিধা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের সুবিধা-অসুবিধা বিষয়ে এ উপাচার্য বলেন, নিজস্ব সুপরিসর ক্যাম্পাস মানসম্মত শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে নিজস্ব ক্যাম্পাসই শিক্ষার মানের একমাত্র মাপকাঠি নয়। বড় ভবন হলেই চলবে না, মানসম্মত শিক্ষা প্রদানকে তিনি অতিপ্রয়োজন বলে মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীরাও চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছেন। বলা হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য চাহিদামাফিক যোগ্যতার অভাব। এ থেকে উত্তরণে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার করণীয় প্রসঙ্গে এ উপাচার্য বলেন, চাকরি লাভের ক্ষেত্রে ডিগ্রিধারীদের শিক্ষার মানের পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় শিখতে হয়Ñ যেমন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান কী চায়, অর্জিত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশের সাবলীলতা ইত্যাদি। একদিকে যেমন শিক্ষার মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিলগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তার মধ্যে ইংরেজি ভাষার ওপর পারদর্শিতা, বিশ্লেষণমূলক দক্ষতা অর্জন, সততা ও নিষ্ঠা, কম্পিউটার-ইন্টারনেট বিষয়ক ব্যবহারিক জ্ঞান ইত্যাদি।

মানসম্মত উচ্চশিক্ষার জন্য যথোপযুক্ত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি ছাত্রদের মননশীলতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার (লিডারশিপ) উৎকর্ষতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান করে আসছি। সেই সঙ্গে ডিরেক্টরেট অব স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষা এবং পেশা সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উচিত ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করা এবং লেখাপড়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা ও অন্যান্য লিডারশিপ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে মেধা-মননকে বিকাশ করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist