মো. সোহাগ বিশ্বাস
রাজার চিঠির নেপথ্যে কবিগুরু
১৯৩৯ সালের কথা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠির জবাব পাওয়ার পর হরিদাস নিজেকে সাহিত্য-সংস্কৃতির কাজে সঁপে দেন। সময়ের প্রবাহে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বাধলে সবাই যখন ভারতে চলে যাচ্ছিল, তখন হরিদাস তার ভিটে ছেড়ে না যাওয়ার পন করে। কেননা তার এই ঠিকানায় রবীন্দ্রনাথের চিঠি এসেছিল।
তাই সে এই ঠিকানা ছেড়ে যেতে চায় না। নাটকটিতে ৪৭-এর দেশভাগ ও মাতৃভূমিকে আঁকড়ে থাকতে দেখা গেছে। নাটকটির রচয়িতা মাহফুজা হেলালী পরম যতেœ অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালকে তুলে এনেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় হরিদাস বসাকের স্বপ্নভঙ্গ হয়। পুড়িয়ে ফেলা বাড়িঘর দুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে হরিদাস বসাক সেদিন তার আত্মজনের খোঁজ নেন না, শুধু শিশুর মতো হাহাকার করেন চিঠিটির জন্য। এ অবস্থায় পাকিস্তানি আর্মি এসে দাঁড়ায় হরিদাস বসাকের সামনে। তার মুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনে আর্মিরা তাকে বেয়োনেট দিয়ে মারতে থাকে। একসময় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে হরিদাস বসাক।
নাটকটির অভিনেতা স্মরণ সাহা বলেন, সাভারের কিছু নাট্যপ্রেমী মিলে ১৯৯৫ সাল থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলন করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এখানে কোনো অডিটোরিয়াম তৈরি হয়নি। তাই আমাদের খোলা আকাশের নিচে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর যদি একটু নজর দিয়ে এখানে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করেন তাহলে সাভারে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আরো বেগবান হবে।
দর্শকনন্দিত এ নাটকটি শিল্পশৈলী দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন স্মরণ সাহা, মাহামুদা ইয়াসমিন সুমি, সুইটি চৌধুরী, শাহনাজ শারমিন খান শিমু, ইয়াসিন শামীম, বাহারুল ইসলাম বাহার, রফিকুল ইসলাম রনি, মাহামুদুল হাসান মুকুল, রোকুনুজ্জামান আপেল, সোয়েব হাসনাত মিতুল, সজীব ঘোষ ও রিপা হালদার। নাটকের আলোক পরিকল্পনা ঠান্ডু রায়হান, নৃত্যনির্মিত অনিকেত পাল, পোশাক পরিকল্পনা এনাম তারা সাকী, আবহ সংগীত রামীজ রাজু ও সোয়েব হাসনাত মিতুল।
এ পর্যন্ত নাটকটির নয়টি প্রদর্শনী হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দেশে ও চারটি ভারতের মঞ্চে প্রদর্শিত করা হয়েছে।
নির্দেশক দেবাশীষ ঘোষ বলেন, ‘রবীন্দ্র সাহিত্যের সমুদ্রে অবগাহন করে হরিদাস বসাক যে আদর্শের কথা বলতে চেয়েছেন, সেই চিত্রটি নাট্যক্রিয়ায় ফুটিয়ে তোলাই এ নাটকের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ হরিদাস তার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে যখন প্রতিকূল পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়েছেন, তখন আশ্রয় খুঁজেছেন রবীন্দ্রসাহিত্যের নাটকে, কবিতার ছন্দে; এবং সমাধানও পেয়েছেন। সবচেয়ে মনোযোগী হতে হয়েছে ওই অংশগুলো উপস্থাপনে। আমাকে প্রতিটি মুহূর্তে মনে রাখতে হয়েছে যে, দর্শকদের রবীন্দ্রসাহিত্যের সঙ্গে সংযোগ কম। সেই দর্শককে সীমিত সময়ের মধ্যে ওই অংশের বিষয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেয়া, যেন তার বোধগম্য হয়। নাটকের ব্যাপ্তিকাল ১৯৭১ পর্যন্ত এবং ঘটনাটি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি স্থান-কালের সীমা ছাড়িয়ে সর্বজনীনতা দেয়ার।’
"