আমানত উল্লাহ সোহান
বারবার বাংলাদেশে আসতে চাই : রাতাশ্রী দত্ত
‘তুখোড়’ ছবির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার অভিনেত্রী রাতাশ্রী দত্ত। আজ সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘তুখোড়’। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-
শৈশবের মজার কোনো ঘটনা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে?
রাতাশ্রী : শৈশবে আমার পড়াশোনার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল। এর পাশাপাশি নৃত্যটাকে অনেক ভালোবাসতাম। আমি কিন্তু একজন ক্লাসিক্যাল ড্যান্সারও। শৈশব থেকে আমার একটা বাতিক ছিল। আর তা হলো, যখন কোনো ছবি দেখতাম, হোক সেটা বাংলা কিংবা হিন্দি, ছবির যে অংশটা আমার ভালো লাগত, সেই অংশটার মতো সেজেগুজে আয়নার সামনে অভিনয় করতাম।
যে গুণের কথা বলে আনন্দ পানÑ
রাতাশ্রী : আমি সব আইটেমই রান্না করতে পারি। ছোটবেলায় বাড়ির লোকেরাই দুষ্টুমি করে বলত, ‘তুমি তো রান্নাবান্না করতে পারো না। শ্বশুরবাড়ি গেলে তাড়িয়ে দেবে।’ সেই সময় থেকে সবার মুখ বন্ধ করার জন্য রান্নাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এখন ৫০ জনের রান্নাবান্না একসঙ্গে করতেও আমার প্রবলেম হবে না।
মিডিয়ায় আসার গল্পটা জানতে চাইÑ
রাতাশ্রী : এমবিএ শেষ করে চাকরিতে যুক্ত হই। কিন্তু চাকরিতে সকাল ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নিজেকে এক কেন্দ্রিক আটকে রাখা সম্ভব ছিল না। সব সময় কবিতা আবৃত্তি, নাচ, বই পড়া, হৈ-হুল্লোড়কে খুব মিস করতাম। কিছুতেই আত্মতৃপ্তি পেতাম না। এরপর একসময় একটা রিয়েলিটি শোতে সেরা হয়ে মডেলিংয়ের খাতায় নাম লেখাই। তারপরই চ্যালেঞ্জ নিয়ে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে মিডিয়ার পথে পা বাড়াই।
কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ছবিতে কিভাবে অন্তর্ভুক্তি?
রাতাশ্রী : আসলে ‘তুখোড়’ ছবির প্রস্তাব পাই আমাদের ওখানকার একজন কাস্টিং ডিরেক্টরের মাধ্যমে। উনি একদিন আমাকে হঠৎ করে জানালেন, ‘রাতাশ্রী, আমরা বাংলাদেশ থেকে একটা ভালো প্রজেক্ট পেয়েছি। তার জন্য তোমাকে সিলেক্ট করেছি। তুমি কি কাজ করতে ইচ্ছুক?’ আমার জন্য এটা ছিল একটা ইন্টারন্যাশনাল কাজের প্রস্তাব। প্রথমে ভাবলাম, আমাকে আবার বাইরের দেশ থেকে ছবির জন্য প্রস্তাব দেবে কে? এরপর লাবু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে, গল্প শুনে এই ছবিতে নাম লেখাই।
আপনার চরিত্র সম্বন্ধে বলুন।
রাতাশ্রী : ছবিতে আমার ক্যারেক্টারটা ‘মারিয়া’ নামে। এখানে দর্শকরা মারিয়াকে বিভিন্ন রূপে দেখবে। কখনো মারিয়া ড্রাগ অ্যাডিক্টেড, কখনো ডিপ্রেশনে ভোগা একটি মেয়ে কিংবা কখনো ভালোবাসার মোহে পাগলপ্রায় মেয়ের চরিত্রে। এসব চরিত্র ফুটিয়ে তোলাটা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সবশেষে আমি আনন্দিত এই ভেবে যে, এত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েও আমি ভালো কিছু করতে পেরেছি।
আপনার আর শিবলির কেমিস্ট্রিটা কেমন ছিল?
রাতাশ্রী : আসলে আমি আর শিবলি দুজনই ক্যামেরার সামনে নতুন। এ ক্ষেত্রে ছবিতে আমদের কেমিস্ট্রি নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকলেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছি। আর এতে নানাভাবে লাবু ভাই, সানজিদ ভাই, রাজীব ভাইসহ প্রোডাকশনের সবাই ভীষণভাবে হেল্প করেছে।
শুটিংয়ে হাসির কোনো ঘটনা ঘটেছে?
রাতাশ্রী : ছবির একটি দৃশ্যের শুটিং ছিল সোনারগাঁয়ে। আমি একেবারে পাতলা পোশাকে ভিলেনের দিকে গুলি তাক করে তাকে থ্রেট দেবো। কিন্তু সময়টা ছিল খুব শীতের। প্রচন্ড শীতে আমি ঠক্ঠক করে কাঁপছিলাম। কিছুতেই ভিলেনকে থ্রেট দিতে পারছিলাম না। দৃশ্যটির কথা মনে পড়লে আমার এখনো হাসি পায়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো লেগেছে কোনটি এবং মন্দ লেগেছে কোনটি?
রাতাশ্রী : মুড়ি খুবই ভালো লেগেছে। একটু আগেই মুড়ি খেয়ে এসেছি। আর মন্দ লাগার কথা যদি বলি, তাহলে বলবো ঢাকা শহরের ভয়ঙ্কর জ্যামের কথা। কলকাতায়ও জ্যাম হয়, কিন্তু ঢাকা শহরের মতো এত ভয়ঙ্কর নয়। জ্যামে অনেক সময় নষ্ট হয়, যা মোটেই কাম্য নয়।
উড়িষ্যা, কলকাতা এবং বাংলাদেশÑতিন জায়গার মিডিয়ায় আপনার কাজ করা হয়েছে। তিন জায়গায় কাজের কেমন পার্থক্য আপনার চোখে পড়েছে?
রাতাশ্রী : আমি তো নতুন, তাই কাজের পার্থক্যটা হয়তো নিখুঁতভাবে বলতে পারব না। তবে কলকাতা অনেকটা এগিয়ে আছে কাজের দিক থেকে। আর বাংলাদেশের মিডিয়ার কথা যদি বলি, তাহলে এককথায় বলবো, মিডিয়ার সব দিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দারুণভাবে।
টালিউড ও ঢালিউডে প্রিয় নায়ক কে?
রাতাশ্রী : টালিউডের নায়কদের মধ্যে জিৎকে আমার দারুণ পছন্দ। আর ঢালিউডের নায়কদের মধ্যে রাজ্জাক স্যার তো আমার ছোটবেলা থেকেই পছন্দের। তারপর যদি বলি, তাহলে শাকিব খানের কথা তো বলতেই হবে।
বাংলাদেশে আরো কাজের ইচ্ছা আছে?
রাতাশ্রী : অবশ্যই। ভালো মানের গল্পসহ সবকিছু ব্যাটে-বলে মিলে গেলে কেন কাজ করব না? বাংলাদেশের মিডিয়া আমাকে খুব সহজেই আপন করে নিয়েছে। আমি বারবার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসতে চাই।
দর্শকদের উদ্দেশে কী বলবেন?
রাতাশ্রী : দর্শকদের উদ্দেশে আমার একটাই বলার কিংবা চাওয়ার আছে। আর তা হলো, আপনারা হলে গিয়ে ‘তুখোড়’ ছবিটি দেখুন। আশা করি ভালো লাগবে। আর যদি ছবি দেখে আপনাদের কাছে মন্দ লাগে, তাও আমাদের জানাবেন। তার পরও হলে গিয়ে ছবিটি দেখুন। আপনারা হলমুখী না হলে আমরা উৎসাহ পাব কোথা থেকে?
"