তুহিন খান নিহাল

  ১৭ নভেম্বর, ২০১৮

ফোক ফেস্টের পর্দা নামছে আজ

সুদীর্ঘকালের পথ-পদচারণে বাংলার মাটির রূপ, রস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অবিরাম ঢেউ খেলে যায় অনিন্দ্য সুন্দর লোকজ সুরের মোহনা। যে সুরের মোহনায় খুঁজে পাই বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক ইতিহাস। যে ইতিহাসের পরতে পরতে গেঁথে আছে বাংলা লোকগানের বৈচিত্র্যময় সুর ও সংগীত। বাঙালির নিজস্ব সম্পদÑবাংলা লোকসংগীতকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সারা বিশ্বে লোকসংগীতের গৌরবময় সুদৃঢ় অবস্থান তৈরির লক্ষ্য নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় লোকসংগীতের উৎসব ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট, আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব-২০১৮।’ সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রথম দিন দর্শক সমাগম কম থাকলেও, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম পূর্ণ থাকে দর্শকদের আনাগোনায়। গানের তালে তালে নাচ এমন বিনোদনের মধ্যেই কেটে যায় এই আয়োজনের দ্বিতীয় দিন। এদিন বাংলাদেশের দুই শিল্পী মমতাজ ও স্বরব্যাঞ্জো ব্যান্ডের পরিবেশনা ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন ভারতের রাঘু দিক্সিত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে লস টেক্সমেনিয়াক্স ও বাহরাইনের মাজায ব্যান্ড দলের পরিবেশনা। দেশীয় সংগীতপ্রেমীদের পাশাপাশি এ আয়োজনে প্রতিবারই দেখা মেলে বিদেশি দর্শণার্থীদের। দল বেঁধে তারা এই লোকসংগীত সন্ধ্যা উপভোগ করতে আসেন। আজ এই আয়োজনের শেষ দিন। বাংলাদেশের বাউল কবির শাহ্, শায়ান চৌধুরী অর্ণব ও ব্যান্ড দল নকশীকাঁথার পরিবেশনা ছাড়াও আজকে মঞ্চে থাকবেন পাকিস্তানের শাফকাত আমানাত আলী ও স্পেনের লাস মিগাস ব্যান্ড দল। এই আয়োজনের টেলিভিশন সম্প্রচারে রয়েছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙা। এ ছাড়া গ্রামীণফোনের অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসের বায়োস্কোপ লাইভে থাকছে অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখার সুযোগ।

শেষ দিনের পরিবেশনায় থাকছেন যারা

বাউল কবির শাহ্

বাংলা লোকসংগীতের এক অনন্য নাম বাউল কবির শাহ্। নিজের গায়কী দিয়ে তিনি শ্রোতা-দর্শক সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। ১৯৭৬ সালে জন্ম নেওয়া এ সংগীতশিল্পী মাত্র তেরো বছর বয়স থেকে গানের চর্চা শুরু করেন। বাউলস¤্রাট শাহ্ আবদুল করিমের কাছে তার গানের হাতেখড়ি। বিচ্ছেদ ভাবের গান, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি গানে পারদর্শী এই শিল্পী বাংলাদেশের গানের জগতে আশীর্বাদস্বরূপ।

শায়ান চৌধুরী অর্ণব

ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সঙ্গে পরিচয় গায়ক, গীতিকার ও চিত্রশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণবের। তার বাবা স্বপন চৌধুরী ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী এবং চাচা বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী তপন চৌধুরী। ক্লাস সেভেনে থাকতেই অর্ণব হাতে তুলে নেন এ¯্রাজ। চলতে থাকে এ¯্রাজের ওপর তালিম। এরপর আস্তে আস্তে সংগীতের বিভিন্ন ধারায় জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করেন। শান্তিনিকেতন থেকে এমএফএ ডিগ্রি লাভ করেন। বন্ধুরা মিলে তৈরি করেন ‘বাংলা’ নামে জনপ্রিয় ব্যান্ড। জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানই অর্ণবকে জনপ্রিয় করে তোলে সাধারণ মানুষের মাঝে।

নকশীকাঁথা

গানের দল নকশীকাঁথার প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ে রয়েছে অফুরান ভালোবাসা ও প্রাণশক্তি। এই ভালোবাসা দেশের জন্য, বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে থাকা সব ধরনের গান, বিশেষত লোকগানের জন্য। মনের গহিনে থাকা সেই ভালোবাসা ও সুপ্ত বাসনাগুলোকে বিনিসুতোয় ক্রমেই বুনন করে চলেছেন নকশীকাঁথার সদস্যরা। নকশীকাঁথার জন্ম ২০০৭ সালে। তখন ব্যান্ডের নাম ছিল গানওয়ালা। তখন গানের উপজীব্য ছিল বিভিন্ন সামাজিক সংকট। তারপর ২০১১ সাল থেকে লোকগান নিয়ে একনিষ্ঠ গবেষণায় ডুবে যায় দলটি। নাম হয়ে যায় নকশীকাঁথা। নিজেদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকগানগুলোকে তারা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করে আসছে নিজেদের ঢঙ্গে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের লোকগানগুলো নিজেদের দেশের দর্শকদের সামনে তুলে ধরছে। বর্তমানে এই ব্যান্ডে আছেন সাজেদ ফাতেমী- ভোকাল ও পারকেশনস, বুলবুল-কাহন, ঢোল ও ডিজ্যাম্বে, সুমন-অ্যাকুইসটিক গিটার, রাবাব ও দোতারা, ফয়সাল-বেইজ গিটার, রোমেল-মেলোডিকা, অ্যাকোরডিয়ান।

শাফকাত আমানাত আলী

পাকিস্তানের স্বনামধন্য ওস্তাদ আমানাত আলী খানের ছেলে শাফকাত আমানাত আলী, পাটিয়ালা ঘরানার নবম বংশধর। চার বছর বয়স থেকেই হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যাল সংগীতের তামিল নেন তিনি। শাফকাত আমানাত আলীর গায়কীতে তার বাবা এবং চাচা ওস্তাদ ফাতেহ্ আলী খান সাহেবের প্রভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে রোশনারা বেগমের গায়কী থেকে তিনি গানের অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকেন। ক্লাসিক্যাল সংগীতে পারদর্শী শাফকাত আমানাত আলী সুফি এবং পাকিস্তানের লোকসংগীতের জন্য বিশ্বের সংগীতমহলে বেশ সমাদৃত।

লাস মিগাস

স্পেনের বার্সেলোনার ব্যান্ড লাস মিগাস ২০০৪ সালে গঠিত হয়। অনেকে তাদের গানগুলোকে বলে থাকেন মেডিটেরিয়ান গান, কেউবা বলেন আত্মার গান। সত্যিই তাই লাস মিগাসের সংগীতকে নির্দিষ্ট কোনো ঘরানায় আখ্যায়িত করা যায় না। মূলত নিজস্ব ছন্দের অনুপ্রেরণা থেকেই লাস মিগাসের এগিয়ে চলা। বর্তমানে এই ব্যান্ডটির সদস্য সংখ্যা চারজন। বেগো সালাযার-গায়িকা, মারতা রোবলস-গিটার, আলিশিয়া গ্রিলো-গিটার এবং রসার লসকস-ভায়োলিন। চারজনের ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা, মতাদর্শ এক করে তৈরি করেন তাদের মিউজিক, যা শ্রোতাকে নিয়ে যায় এক নস্টালজিক, ইউফোরিক যাত্রায়। স্পেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভ্যালে সংগীত পরিবেশনের জন্য তারা ডাক পান। ২০১৭ সালে লাস মিগাসের

সর্বশেষ অ্যালবাম ‘ভেন্তে কনমিগো’ ফ্লেমিংগো মিউজিক হিসেবে ১৮তম

লাতিন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close