বিনোদন প্রতিবেদক

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

তবলার সঙ্গে মিলন ভট্টাচার্য্যরে ৪৬ বছর

মিলন ভট্টাচার্য্য, এ দেশের একজন প্রতিথযশা তবলাবাদক। বাংলাদেশের প্রায় সব শিল্পীর গানেই তিনি তবলা বাজিয়েছেন। জন্ম তার চট্টগ্রামে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ওস্তাদ কানাই লালের কাছে তার তবলায় হাতেখড়ি। তার কাছেই তিনি টানা দেড় যুগ তবলা বাজানো শিখেছেন। পরে আরো দুই বছর ওস্তাদ আদিত্য নারায়ণের কাছেও তালিম নিয়েছেন। তবে যার তবলা বাজানো মিলন অনুসরণ করতেন তিনি হচ্ছেন ওস্তাদ রাধা কান্ত নন্দী। যিনি ভারতের সংগীতশিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তবলা বাজাতেন।

মিলন জানান, সেই সময়ে তিনি শান্তিনিকেতন বিপ্লব ভট্টাচার্য্যরে কাছেও তবলায় তালিম নিয়েছেন কিছুদিন। একসময় মিলন তার বাবা স্বর্গীয় ধীরেন্দ্র্র লাল ভট্টাচার্য্যরে আওতাধীন চাকরি করতেন। কিন্তু চাকরিতে তার মন বসত না। তাই তার মা-বাবার পরামর্শেই নিজেকে পেশাগতভাবে তবলাবাদক হিসেবেই গড়ে তুলেন। দেশ স্বাধীনের আগে চট্টগ্রামে যত বড় বড় অনুষ্ঠান হতো, সব অনুষ্ঠানেই মিলন ভট্টাচার্য্য তবলা বাজাতেন। পেশাগতভাবেই তিনি তা করতেন। তবে তার আগে তিনি গানের শিক্ষক রবীন্দ্র লাল ধরের সঙ্গে থেকে বিভিন্ন বাসায় তবলা বাজাতেন। মাস শেষে কখনো পাঁচ টাকা আবার কখনো দশ টাকা পেতেন।

চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে প্রয়াত পরিচালক আজমল হুদা মিঠু মিলনের তবলা বাজানোর প্রেমে পড়েন। তাকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। ১৯৭২ সালে ঢাকায় এনে মিলনকে ‘সুর বিতান’ অনুষ্ঠানে তবলা বাজানোর সুযোগ করে দেন। শুরু হলো পুরোপুরি পেশাদার তবলাবাদক হিসেবে ব্যস্ততা। পরে মিঠু তারই একটি চলচ্চিত্রের গানে তবলা বাজানোর সুযোগ করে দিলেন, যার সংগীত পরিচালক ছিলেন আলী হোসেন। একই সময়ে মিলন ‘বর্গী এলো দেশে’ চলচ্চিত্রের গানেও তবলা বাজান, যার সংগীত পরিচালক ছিলেন বশীর আহমেদ। এভাবে একে একে ‘অলংকার’, ‘আনারকলি’, ‘শুভদা’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’সহ আজ পর্যন্ত অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে তিনি তবলা বাজিয়েছেন।

মিলনের মনে পড়ে ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘একদিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘শত জনমের স্বপ্ন’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানে তবলার তালে তালে মুগ্ধ করেছেন এ দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শককে।

মিলন ভট্টাচার্য্য জানান, অডিও গানে পনেরো হাজারেরও বেশি গানে তিনি তবলা বাজিয়েছেন। সৈয়দ আবদুল হাদী, সুবীর নন্দী, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, কনকচাঁপাসহ বলা যায় প্রায় সব শিল্পীর গানেই তিনি তবলা বাজিয়েছেন। একজন তবলাবাদক হিসেবে ভীষণ গর্ববোধ করেন মিলন ভট্টাচার্য্য। মিলন বলেন, ‘আমি ভীষণ গর্ব নিয়েই বলি সব সময়, আমি একজন তবলাবাদক। এই প্রতিভা ঈশ্বর সবাইকে দেন না। আমাকে দিয়েছেন। তাই এটা আমার পথচলার অলংকার। তবে কষ্ট হয়, আমরা যারা নিয়মিত যন্ত্রশিল্পী হিসেবে কাজ করি, তাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close