জাহিদ আজিম

  ১৯ আগস্ট, ২০১৮

‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’ দর্শক মাতালো

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে আগুন জ্বালিয়েছিল ঘাতকরা, সে আগুনে আজও দগ্ধ হয় সমগ্র বাঙালি জাতি। তাই প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাতি মাতমসহযোগে শোক পালন করে। মাতমের প্রকাশ হয় শোকগীতি, মুজিবাদর্শপ্রীতি, স্মরণ সভা-আলোচনা, হত্যাকা-ের প্রতিবাদী আলাপ, হয় কিছু নাটক-চলচ্চিত্র সংলাপ। কিন্তু মঞ্চনাটকে এই বিষাদের প্রতিরূপায়ন যৎসামান্যই ছিল বটে। তবে আশার আলো, শোকের মাতমে নতুন সংলাপে আঁকা নাটক মঞ্চায়িত হলো ১৩, ১৪ ও ১৫ আগস্টে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার মঞ্চতটে।

নাটক ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’, নাট্যরচনায় আনন জামান, পরিকল্পনা-নির্দেশনায় আশিক রহমান লিয়ন, প্রযোজনায় ‘মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়’। প্রথমেই সীমাহীন সম্মান প্রদর্শন করতে হয় ‘মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়’কে কেননা বাঙালির আরশ সীমানা পর্যন্ত যার উচ্চতা তাকে মঞ্চে দাঁড় করানোর সাহস করা পুলসিরাত পার হওয়ার মতো দুরূহ কাজ নিশ্চয়ই। আর আমরা নাট্যকার-নির্দেশককে ধন্যবাদ দেব কিছুটা সমালোচনার তরবারির নিচে দাঁড় করিয়ে। নাটকটি লেখা ও পা-ুলিপি প্রকাশ করা নাট্যকারের প্রথম ব্রত। সে সৃজনশ্রমের জন্য নাট্যকারকে ধন্যবাদ, ধন্যবাদ তাকে জাতির বেদনা ধারণ করে এবং জাতির পিতার প্রতি প্রেমের প্রকাশ এ নাট্যসৃজন এ জন্য, ধন্যবাদ তাকে নাটকে দেশজ বর্ণনাত্মক রীতির নাট্যাঙ্গিক প্রয়োগের জন্য, ধন্যবাদ তার সুশব্দ প্রয়োগের প্রবণতাকে। কিন্তু নাটকটিতে তিনি কথকের মুখে যে শব্দমালা বসিয়েছেন, তাতে কাব্যিক সৌন্দর্য যেমন আছে, তেমনি অমসৃণতাও আছে। এতে সংলাপ আওড়ানো অভিনেতার জন্য যথেষ্ট কঠিন ও সময়সাপেক্ষ আত্মস্থ করার জন্য। এ জন্য কুশিলবদের ধন্যবাদ দেওয়া সমালোচকের জন্য ফরজ। তবে সবচেয়ে কঠিন কাজটি যিনি করেছেন, যিনি গুণীনের ভূমিকায় কাজ করেছেন, তিনি হচ্ছেন নির্দেশক আশিক রহমান লিয়ন। যে ঘটনা নিয়ে নাটক, সে ঘটনা জিব্রাইলের অগ্নিপক্ষের সমান আর ঘটনার নায়কের সঙ্গে তুলনা দেওয়ার মতো পাহাড়-পর্বত পাওয়া গেল না। সুতরাং এ ঘটনা ও নায়কের চরিত্র ছোঁয়ার প্রচেষ্টা করার প্রয়াস যে নির্দেশক করেছেন, তার জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। নাটকটিতে যেহেতু বর্ণনার ঘনঘটা আছে, সেহেতু ওই ঘটনা উপস্থাপনে জটিলতা এনে দিয়েছে নির্দেশকের জন্য। যদি চরিত্রদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংলাপে ভরপুর থাকত, তবে কিছুটা হলেও নির্দেশক সুবিধা পেত বোধ হয়। তবে নির্দেশক যেভাবে মঞ্চ-উপাদান ব্যবহার করে দৃশ্যের অবতারণা করেছেন, তার জন্য তাকে সাধুবাদ। যার মাধ্যমে তিনি পা-ুলিপির অমসৃণতাকে মসৃণ করেছেন বৈকি। নির্দেশক যদি পিকচারাইজেশনের প্রয়োগ যথার্থ না ঘটাতেন, তবে নাটকটি ব্যর্থ হয়ে যেত। অর্থাৎ নাট্যকারের কল্পনার সঠিক নির্মাণ হয়েছে নির্দেশকের কল্পনার সঙ্গে সঙ্গমে। যদিও ১৪ আগস্টের প্রদর্শন শেষে নাটকটির সমালোচনায় নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসূফ বাচ্চু ছিলেন খাপছাড়া, যা সচেনতন দর্শককে ব্যথিত করে। এটা মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু মানে ধারালো তরবারি এটা ছোঁয়া যেনতেন বিষয় নয়। এখানে ছোঁয়ার প্রচেষ্টাই বড়।

নাটকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শারীরিক তীব্রতা, বাচনিক স্পষ্টতা আশাব্যঞ্জক, মেজর জিয়া চরিত্রের অভিনেতা বিশেষ অশেষ দর্শক তালির দাবিদার, মূলকথকের ভূমিকায় যিনি সচল ছিলেন ব্যথাতুর অচল পা নিয়ে তিনি সবচেয়ে আশীষের দাবিদার, আর যিনি মহানায়ক শেখ মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেছেন তার শেখ মুজিব হওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় দর্শক মুগ্ধ। তবে এ চরিত্রে সে কেন কারো পক্ষেই দর্শককে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close