তুহিন খান নিহাল

  ২১ এপ্রিল, ২০১৮

সাফল্য পাচ্ছে না কোনো সিনেমা

নানা সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে ঢাকার চলচ্চিত্র। একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত সব ঘটনা ক্রমেই এ সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছে। চলমান এ সংকটের পেছনে দানবের ভূমিকা পালন করেছে যৌথ প্রযোজনা ইস্যু। এ একটি কারণে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন বিতর্ক। আলোচনা-সমালোচনা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও মামলা-হামলা এসবের মধ্য দিয়ে কেটেছে গত একটি বছর। যদিও চলচ্চিত্রের মন্দার বাজারে প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন বছর ২০১৮। তবে সেই প্রত্যাশার শুরুটাও ছিল নেতিবাচকতায় ভরা। বছর শুরুর প্রথম মাসের দুই সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহে চলেছে দেশীয় সিনেমা। আর বাকি দুই সপ্তাহ চলেছে কলকাতার সিনেমা। মানহীন সিনেমার কারণে হলবিমুখ ছিলেন দর্শক। আবার ফেব্রুয়ারিতে এসে সিনেমার অভাবে শূন্য হয়ে পড়ে প্রেক্ষাগৃহগুলো। এ অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় এক মাস নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। এপ্রিলে এসে হলে কিছুটা দর্শক ফিরলেও ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি কোনো ছবিই। কয়েকটি বড় বাজেটের ছবিও দেখাতে পারেনি আলোর মুখ। মোটকথা, ছবির মূলধন ফিরে পাননি কোনো প্রযোজক। দর্শকদের কথা মাথায় রেখে আধুনিক ধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও সাফল্য পাননি নির্মাতারা। ছবির বাজেট, গল্প, লোকেশন, কোনো কিছুতেই টানছে পারছেন না দর্শক। গত বছর নিয়মিতভাবে হলে সিনেমা চললেও এ বছরের প্রথম শুরু থেকে দেশের প্রায় দুই ডজন প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিতভাবেই বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ। লোকশানের কারণে এ উদ্যোগ নিয়েছেন হলমালিকরা। একসময় দেশে হাজারেরও অধিক হলে নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো। কিন্তু সেটি এখন কেবলই অতীত! বর্তমানে শ-তিনেকের মতো হলের অস্তিত্ব রয়েছে। এগুলোর মধ্যেও আবার অনেক হলে নিয়মিত ছবি প্রদর্শিত হয় না। অনিয়মিত ও বন্ধ হলের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা কিনা ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় ধরনের হুমকি। এদিকে সরকারি অর্থায়নে বেশ কয়েকটি সিনেমা হল ডিজিটালকরণের কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছরই মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা কমছে। পাশাপাশি মূলধারার অনেক প্রযোজক সিনেমা নির্মাণ থেকে দূরে সরে গেছেন। যার প্রধান কারণ, মূলধন ফিরে না পাওয়া। আর বর্তমানে যারা প্রযোজনায় আসছেন তাদের অনেকেই চলচ্চিত্রের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা থেকে তারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন না। ফলে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ভালোর চেয়ে মন্দের দায়ই বহন করতে হচ্ছে বেশি চলচ্চিত্রকে। এসব সমস্যার সঙ্গে ঢাকার চলচ্চিত্রে নতুন করে যোগ হয়েছে শিল্পী সংকট। আশির দশকজুড়ে একাধিক নায়ক-নায়িকা দাপিয়ে অভিনয় করেছেন। ওই সময়টাতে নির্মাতারা গল্পের সঙ্গে মানিয়ে তাদের পছন্দের নায়ক-নায়িকা সহজেই বাছাই করে ছবি নির্মাণের সুযোগ পেয়েছেন। বর্তমানে তা নেই বললেই চলে।

১৯৮৪ সাল থেকে এফডিসিতে নতুন মুখের সন্ধান শুরু হয়। এই প্রক্রিয়াতে আসা সুব্রত, সোহেল চৌধুরী, দোয়েল, দিতি, মান্নাসহ অনেক শিল্পীই দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন। ১৯৯০ সালের পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। আর তার প্রভাব পড়ে ২০০৫ সালের পরে এসে। পরিচালকদের অনেকেই বলছেন, ওই সময় থেকেই মূলত শিল্পী-সংকটে পড়েছে ঢাকার চলচ্চিত্র। ফলে ভালো মানের ছবি তৈরি হচ্ছে না। বেরিয়ে আসছে না নতুন নতুন শিল্পী। আর এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এ বছর চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি এফডিসির সহযোগিতায় নতুন মুখের সন্ধানের ঘোষণা দেন। তবে নানা কারণে এ উদ্যোগেও ভাটা পড়েছে। মোটকথা, ঢাকাই চলচ্চিত্রের মহাদুর্দিন চলছে এখন। আর এ দূূরবস্থা নিরসন একমাত্র সরকারের পক্ষেই সম্ভব। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের ধারণাও তাই। তবে আমরা চাই শুধু সরকারই নয়, এই ইন্ডাস্ট্রিকে রক্ষা করতে হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক কাতারে শামিল হতে হবে। ভুলে যেতে হবে সব ভেদাভেদ ও মান-অভিমান। নিজেদের হীনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর আগে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা ঢাকাই চলচ্চিত্রের সেই সুদিনের অপেক্ষায় আছি।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিনেমা,সাফল্য পাচ্ছে না,ঢাকার চলচ্চিত্র
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist