চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

চট্টগ্রাম মহানগরে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টা। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনের এ জে চৌধুরী কলেজ কেন্দ্র। ভোট শুরুর সময় বাকি থাকায় কেন্দ্রের মূল গেট তখনো বন্ধ। ৮টায় খোলা হবে গেট। কিন্তু বাইরে দুই সারিতে অপেক্ষমাণ কয়েক শ ভোটার। ৮টায় গেট খোলার পর একে একে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন সবাই। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে তারা হাসিমুখে ফেরেন ঘরে। শুধু এই কেন্দ্রই নয়, চট্টগ্রামের বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।

গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-১২ আসনে (পটিয়া) আল্লাই ওখারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট দিতে আসাদের লম্বা লাইন। কেউ কেউ ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। ভোট দিতে আসা মাহমুদুল ইসলাম বলেন, জীবনের প্রথম ভোট দিয়েছি। ভোট দিতে সমস্যা হয়নি।

১১টার দিকে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনের পশ্চিম মোহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১-এ গিয়েও বাইরে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। ভেতরে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আল আমিন মুন্সি বলেন, এই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ২২৩। ৬টি বুথে বিরতিহীনভাবে চলছে ভোটগ্রহণ। কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। সহজে ভোট দিতে পারছেন ভোটাররা। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় হালিশহরের পিএইচ আমিন একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দিতে যান শতবর্ষী আরতি বিশ্বাস (১০৫)। এ বৃদ্ধার হাতে লাঠি। দুই পাশে দুই পত্রবধূ। তাদের ওপরও ভর দিয়ে রেখেছেন নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে মনের জোরে ভোট দিতে এসেছেন তিনি। আরতি জানান, অসুস্থ শরীর নিয়ে ছেলেরা আসতে বারণ করলেও, তিনি সে কথা শুনেননি। ভোট প্রদানের দিনটি তার কাছে উৎসবের দিন।

এদিকে চট্টগ্রামে ১৬ আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। সম্পূর্ণ পেপারলেস প্রযুক্তির এই পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন তরুণ ভোটাররা। তাদের মতে, সনাতনী পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার চেয়ে, ইভিএমে ভোট দেওয়া অনেক সহজ। এতে সময়ও কম লাগে। রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম-৯ আসনে সেন্ট মেরীস স্কুল কেন্দ্রে যাওয়া শামীমা শিলা বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া অনেক সহজ। ভোটিং প্রসেসটা পেপারলেস হওয়াটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন রোববার সকাল সোয়া ৯টায় নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দেন। ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারা দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী করতে মুখিয়ে আছেন।

সকাল সোয়া ১০টায় প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেন চট্টগ্রাম-১০ আসনে নৌকার প্রার্থী ডা. আফছারুল আমীন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটাররা লম্বা লাইনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। এলাকায় ১০ বছর যে উন্নয়ন করেছি ও মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম। তাই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

সকাল ৯টায় নগরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে নিজের ভোট দিতে যান চট্টগ্রাম-৯ আসনের নৌকার প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় নগরের চশমা হিলের বাসা থেকে ভোট দেওয়ার জন্য বের হন নওফেল। এরপর বাবা নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবর জেয়ারত করেন তিনি। পরে ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে নগরের পলিটেকনিক ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন তিনি। ভোট দেওয়া শেষে নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে উন্নয়নের মূল্যায়ন করবে। কারণ বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নযজ্ঞের অংশীদার হয়েছে। মানুষ এর সুফল ভোগ করছে।

দৃশ্যত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হলেও চট্টগ্রামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ৩ বিএনপি নেতা ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যাননি। ওই তিন প্রার্থী হলেন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনকে অবহিত করলেও আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি।

এদিকে নগরের জামালখানে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুল উৎসাহের মধ্য দিয়ে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন বিপুল পরিমাণ ভোটার লাইনে আছে। অপেক্ষমাণ আছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যেটা থাকা দরকার, সেটা চট্টগ্রাম মহানগরীতে আছে। সবার অংশগ্রহণ অবশ্যই আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close