মো. শাহ আলম, খুলনা

  ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

খুলনা-১ আসন

ঐক্যফ্রন্ট-মহাজোটের ভোটে ভাগ বসাচ্ছে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন

জেলার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারের মাঠ দেখে মনে হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট ও মহাজোটের প্রার্থীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এদিকে এই দুই বড় জোটের ভোট ভা-ারে এরই মধ্যে সামান্য হলেও ভাগ বসিয়েছে জাতীয় পার্টি, সিপিবি ও ইসলাম আন্দোলন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিঁড়ি থেকে সুন্দরবনের পাদদেশ পর্যন্ত পরিধি খুলনা-১ আসনের। দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা নিয়েই এ আসন। হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় নিশ্চিত বিজয় ভেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয় প্রত্যাশী। বিএনপির প্রার্থীও প্রচার চালাচ্ছেন জোরেশোরে।

১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শেখ হারুনুর রশীদ ৩২ হাজার ৬৬০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবুল হোসেন নির্বাচিত হন। এরশাদ শাসনামলে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শেখ হারুনুর রশীদ ৪৪ হাজার ৮১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এম নুরুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ১৪ হাজার ২০৩। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৬২ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিবির অচিন্ত্য বিশ্বাসের প্রাপ্ত ভোট ২৪ হাজার। শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাস নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পঞ্চানন বিশ্বাস ৭৫ হাজার ৫৫২ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আমীর এজাজ খানের প্রাপ্ত ভোট ৪৭ হাজার ৫২৩। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ননী গোপাল মন্ডল ১ লাখ ২০ হাজার ৮০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আমীর এজাজ খানের প্রাপ্ত ভোট ৬৮ হাজার ৪২০। সর্বশেষ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পঞ্চানন বিশ্বাস সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এবারের নির্বাচনে দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত পঞ্চানন বিশ্বাস, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত বিএনপির আমীর এজাজ খান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আবু সাঈদ ও সিপিবির অশোক কুমার বিশ্বাস।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ক্ষমতা হারানোর পর এ আসনে জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনের প্রার্থী মাওলানা আবু সাঈদ ৫ হাজার ৭৪৬ ভোট পেয়ে জামানত হারান। দুই উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে সিপিবির সমর্থক সংখ্যা ২০ হাজারেরও ওপরে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচন তাই প্রমাণ করে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা অভিযান শুরু হয়েছে। এ আসন এলাকায় গত ছয় দিনে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ নির্বাচনী এলাকার চালনা বাজার, বাজুয়া, নলিয়ান, বারোআড়িয়া ও বটিয়াঘাটা সদরের হাটে দফায় দফায় গণসংযোগ হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অর্ধেকের বেশি ভোট হলেও খুলনা নগরীর পার্শ্ববর্তী জলমা ইউনিয়নে নতুন বসতিদের মধ্য থেকে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে। বিএনপি প্রার্থী এ সুযোগ কাজে লাগাতে চান। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা আবু সাঈদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকে তিনি অনুকূল সাড়া পাচ্ছেন। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় শুক্রবার নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছেছেন। তার ভাষ্য দলীয় ইমেজ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশের সমর্থন তিনি পাবেন।

বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় দলের সব স্তরের নেতাকর্মী তাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ফলে তার বিজয় নিশ্চিত বলে তিনি আশাবাদী।

বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ খান জানান, মানুষ পরিবর্তন চায়। আওয়ামী লীগের এক রোখা শাসনের বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদী।

উল্লেখ্য, এ আসনের ১০৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। এবারে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৬২ জন এবং নারী ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৭৩ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close