এই দিন সেই দিন বিজয়ের দিন
কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। এটাই বোধহয় প্রকৃতির নিয়ম এবং চিরন্তন। তাই যখনই ১৬ ডিসেম্বর এসে আমাকে স্পর্শ করে, আমি বেদনাপ্লুত হই। অনেক কিছু হারানোর কথা মনে পড়ে। কিন্তু যেদিন সে প্রথম এসে আমার দরজায় টোকা দিয়েছিল, তখন তো এ রকম মনে হয়নি। আমার উচ্ছ্বাসে সব দেশ যেন ভেসেছিল আনন্দের ঝরনাধারায়। অনেকেই হয়তো বলবেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়। সম্ভবত আমাদের ফেলে আসা সেই ইমোশন এখন করপোরেটের জালে আটকা পড়ে তাদের সেই স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। নতুনভাবে নতুন করে ধার করা পোশাকে চলতে শিখেছি আমরা।
কিন্তু কেন? এমন তো কথা ছিল না। আমরা কেউ কাউকে সম্মান করব না, সম্মানীয়কে অমর্যাদার আসনে বসিয়ে অযোগ্যকে যোগ্যতার মালা পরিয়ে দেশকে হীরক রাজার দেশে পরিণত করব! এটা তো আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। আমাদের পূর্বপুরুষরা এমন শিক্ষা তো আমাদের দিয়ে যাননি। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও তো এ রকম হওয়ার কথা বলেনি। তবে কেন আমরা সবকিছু ভুলে গিয়ে বিপরীত পথে চলতে শুরু করেছি! আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা যে ব্রত নিয়ে দেশের ও দশের মুক্তির জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তার কতটুকু বাস্তবায়নে আমরা সক্ষম হয়েছি! এ প্রশ্নের জবাবে বলতেই হয়, সফলতা এখনো অনেক দূরে। আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যথাযথ সম্মান দিতেও ভুলে গেছি। দিবস এলেই মনুমেন্টগুলোকে পরিষ্কার করার কথা মনে পড়ে। সারা বছর এলাকাটি চতুষ্পদ জন্তু, ভবঘুরে আর নেশাখোরদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে কাউকে একবারও বলতে শুনিনি, এদের মর্যাদাকে নিরাপদ করা হোক। এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, ‘যে জাতি তার বীরদের সম্মান দিতে জানে না, সে জাতি কখনো মর্যাদাবান জাতি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে না।’
আমরা মনে করি, বোধের দরজা খুলে মুখোমুখি দাঁড়াবার বোধহয় সময় এসেছে। আমাদের বীরদের স্মরণে নির্মিত প্রতিটি স্মৃতিস্তম্ভকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতায় এনে নান্দনিক করে গড়ে তোলার সময় এসেছে। এতে আমাদের আগামী প্রজন্ম সেখানে যাওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে আমরা আমাদের সেই মহান বীরদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সজাগ হওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার সুযোগ পাব। আমরা আরো মনে করি, প্রতিদিন আমরা আমাদের বীর সন্তানদের স্মরণ করতে চাই। আশা করব সরকার দেশবাসীর এই ছোট্ট প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসবে।
"